এখন গভীর রাত, পার হয়ে যায় প্রহরের-
পরের প্রহর,
মহাকাশে ছায়াপথে পাড়ি দেয় এ প্রহরে-  
আলোকবর্ষ দূরে, কসমিক রশ্মিরা।
এখন গভীর রাত, ঘুমে তন্ময়; তোমাদের-
চিরচেনা নগর ও বন্দর;
যান্ত্রিক সভ্যতায় ও চলে নিষ্প্রাণ বিরতি।
এমনকি উচ্ছল নদীরা, যে প্লাবিত করে-
আমাদের সারাদিন, সেও বুঝি ঘুমে
হয়েছে নিস্তরঙ্গ; নিঃশব্দ পারাপার হয় ম্লান,
তবু জেগে থাকি,
বন্ধু অনিদ্রার; আমি অনিদ্রাসারথি।


চোখ বুজে থাকি নিদ্রার প্রতীক্ষায়, প্রহরের পর
প্রহর, হয় পার যুগ যুগান্তর,
যেন বিবর্তনের ছকে লক্ষ বছর।  
জানি নিদ্রা দেবির মিলন প্রত্যাশা হবেনা পূরণ,
তবুও অপেক্ষায় থাকি বারবার।  
বহুকাল হয়ে পার আসে নাতো ঘুম-
ঘুমিয়ে পড়েছে সবে, নিঃসঙ্গ একা।


প্রথম রাতের যে তারারা চঞ্চল,
প্রথম রাতের যে চাঁদ হাসিতে উজ্জ্বল,
পৌরাণিক গাথায় খোঁজে অমর প্রেমিক।
সেও বুঝি ক্লান্ত হয় ঘুমে-
শুধু জেগে থাকি একা সহস্র শতাব্দী,
একটু ঘুমের প্রতীক্ষায়, অনিদ্রাসারথি।


তুমি সে ও তোমরা হয়তো গভীর ঘুমে,
হয়েছো নিঃশ্চুপ,
মর্ত্য কাঁপানো কোন ঘন্টাধ্বনিও হয়তো-  
এখন পারবে না জাগাতে তোমাদের,
এ আরাম শীতল ঘুম হতে আজ; তবু-
আমি জেগে আছি,
তবু আমি তোমাদের মতো নই; আমি-
তোমাদের মতো হতে পারিনি।
জেগে আছি স্তব্ধ, সামান্য ঘুমের প্রতীক্ষায়,
আমি অনিদ্রাসারথি।


আরো এক প্রহরের পর, হয়ে যাবে ভোর,
উঠবে সকলে, কোলাহলে ভেসে যাবে-
তোমাদের এ শহর; আমার ঘুমের ঘোর-
আসবে তখন।
এ ভয়াবহ বৈপরীত্য নিয়ে বেঁচে থাকি-  
আজন্ম জীবন; তোমাদের জীবনের উল্লাস-
দেখি বহুদূর হতে, অতি সাবধানে।
যখন আসার কথা বকুলের গান, এ জীবনে
পারিনি ধরতে তাকে; হয়ে গেছে ম্লান।
হারানো ঘুমের মতো হারিয়েছে বহু স্মৃতি-
এ জীবন জার্নাল হতে।
নিজের কথাই আজ পারি না বুঝতে; তবু
ঘুম চাই, পলকের স্তব্ধতায় ঘুম চাই,
পৃথিবীর গভীরতম ঘুম চাই আজ; আমি-
অনিদ্রা সারথি।