(১) নীলকন্ঠঃ
এখানে আকাশ নেই!
মাঝে মাঝে নীল এক পাখি দিয়ে যায় উঁকি,
নাড়ায় সরু পুচ্ছের শীর্ষভাগ; ভেজা পাখা-
ঝাপটিয়ে মেলানকোলিক ভঙ্গিমায়,
থাকে কিছুক্ষণ; সেতো বর্ষণে আক্রান্ত!
তার ফুরফুরে লেজটাকে ভেবে নেই সব,
জল বলো! কি মেঘ বলো!
এমনকি জটায়ুর আত্মবিসর্জন হয়তো ভ্রান্ত!
নীল বলে কিছু নেই মাতাল নভোনীলে,
সংবেদী চেতনা আগ বাড়িয়ে বাড়ায় যন্ত্রণা,
রাস্তার জমা জলে ময়ুরের নাচ দেখে ভেবে নেয়,
পৃথিবীর সব ময়ূরীর চোখেই বসতি-
গড়েছে আকাশ!
আসলে তো নীল বলে কিছু নেই আকাশের কাছে!
কিছু কিছু সত্য প্রবোধ দেয়ার মতো,
মিথ্যার স্যান্ডউইচ!  
এখন আকাশ শেয়ার বাজারের মানিপ্লান্টের,
নিহত পাতার মতোই দরের পতন!
সর্বস্বান্ত হয়ে ক্ষয়িষ্ণু মেঘে আকাশ এখানে,
এক নিস্পৃহ জুয়ারী; গলে গিয়েছে ফুটপাতে!
এই কোণে আকাশ নেই! হয়তো মেঘেরাও নেই,
শুধু সুউচ্চ বহুতলের দুর্লভ ফাঁকে,
একটা নীল পাখি রোদে পুড়ে মাঝে মাঝে ডাকে,
গান গায়! মুগ্ধ হয়ে তার ক্ষণিকের অর্কেস্ট্রায়,
মায়াময় শিসে,
হয়তো ভেবেছ ভুলে আকাশ তাকেই!  
সমস্ত ভুল মিলেমিশে নিঃস্ব হয়েছে অবশেষে,
পুড়ে যাওয়া রোদে এখানে সবই তামাটে,
এখানে আকাশ নেই! চেকের পাতায় আগুন আছে,
আছে আগুনে পোড়া স্যালারির স্টেটমেন্ট!
শুধু আকাশ নেই! হয়তো একটা নীলপাখি মাঝেমাঝে-
দেয় উঁকি!
অরণ্য বিলুপ্ত হলে আর আসবেনা সেও!
  


(২) নীলাম্বরীঃ
এখনো আকাশ আছে জানো!
মস্ত বড় নীল ছুঁয়ে আছে সব; পুরোটা শরীর আর-
নকশী জামাটা!
এমনকি অপরাজিতার রেণুর মতো উদ্বায়ী নীলে-
জড়িয়ে রেখেছে আমার সাধের খোঁপাটা!
এখানেই অলিতে গলিতে নাছোড়বান্দা প্রেমিকের-
মতো দিচ্ছে উঁকি! ছাড়াতে পারিনা পিছু কোনমতে!
সকালের ডেস্কে, বিকালের ছাদে,
সর্বত্র পৌষের ধান শুকানোর মতো ঢাকা আছে,
সর্বগ্রাসী নীলে! এখানে আকাশ নীলাম্বর,
প্রমত্ত মেঘনার বুকের মতো অতি প্রশস্ত সে,
মাঝে মাঝে মর্জিমাফিক সমুদ্র বনে যায়!
অনন্ত শূন্যতা থেকে টুপ টুপ করে গড়ানো নীলে,
সমুদ্র আসে এই বিদুরের মতো প্রাজ্ঞ শহরে!
অতল মন নিয়ে ভাসি আধাডোবা দ্বীপের মতোন,
বাতাসে ঝংকৃত হয়ে বলে হাতের সুবর্ণ কঙ্কণ,
‘খাঁচা ছেঁড়ে উড়ালে এ কেমন বিরহী পাখি?’
অতল সাগর বিষে হলো নীল; সুউচ্চ ফণায় নাচে-
নীল জলরাশি! ঐ তো আকাশ –
বলেছিল কেউ, আমার চোখের মতো গভীরতা তার!
হয়তো সত্য নয়! কে না জানে মিথ্যায় আশার বসতি!
এখন অনেক মেঘ; আমার ধূসর চোখে জমে থাকে,
নিরীহ মাশকারার মতোন!
আমি নীল ঘাসে মেঘ পুষি; ওদের ছুঁয়ো না কেউ!
ওদের ঘুমোতে দাও; যত্ন করে আগলে রেখেছি,
ওদের গর্ভে জমা আছে দুঃখ বহু পুরাতন!
সবার অলক্ষ্যেই পুষেছি মেঘের পাল,
বাস্তুচ্যূত অহল্যার মতোন!
যদি ভালোবেসে ছুঁয়ে দিতে পারো গলে যাব নীলে,
শহর পোড়ানো রোদে ভেসে যাব জলে!  
এখানে আকাশ আছে; এখানে পাখিরা আছে,
তারা পলিনেশীয় সমুদ্রের মতো গাড় নীল স্রোত!