স্তব্ধ শহর! আমার স্তব্ধ শহর!
বিনা নোটিশে তোমার ফটক বন্ধ হলো,
কোন এক ধূর্ত যাদুকর হুট করে,
মঞ্চে বন্ধ করে দিল তার সব কটা শো!
বিরাট ইঞ্জিনের মোটর হয়েছে বিকল,
তাই বন্ধ আছে সাময়িক জীবন সকল!  


অরুন্ধতী নক্ষত্রের মতো তার ছায়া,
আমার ছায়ার পাশে বারেবারে ফিরে আসে!
সেতো আটকা পড়েছে দেয়ালের ওপাশে,
খেলার মাঠের মতো ফাঁকা অলিগলি,
কি এমন ক্ষতি হতো যদি পৌছাত সে!
চাপা ফিসফাসের পারফিউম,
জানালার ফাঁক দিয়ে আসছে ভেসে,
প্রানীর ডাকের মতো মানুষের ডাক!
শুধু তুমি নেই জেনে আকাশ ও অবাক!      


ছোট্ট দোয়েল তবু ভোলেনি ডাকতে,
কার্ণিশে উড়া কাপড়েরা আজো রং ছড়াচ্ছে,
লাল কামিজ, নীল শার্ট আয়ুর পতাকা হয়ে,
স্তব্ধ বারান্দায় বাতাসকে পিয়ানো বানিয়ে,
পাগলের মতো বাজিয়ে চলেছে।
মাঝে মাঝে দিচ্ছে উঁকি কিছু সাহসী মুখ,
উৎসুক চোখ! তুমিতো সেখানে নেই জানি,
তবুও অজান্তেই অপেক্ষায় থাকি!
        
ব্যস্ত শহর তুমি হারালে কোথায়?
নিঃশব্দের চাঁদরে খুব বেশি মানায়না তোমাকে,
তার চোখেও কি আজকাল স্তব্ধতা থাকে!
মোড় গুলো ফাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে একা,
পৃথিবী বুক ভরে নিচ্ছে টেনে,
নিঃসঙ্গ একাকী জীবনের স্বাদ!  
আমরা তো চিরকালই ছিলাম একা একা,
একমাত্র সঙ্গী ছিল বোহেমিয়ান চাঁদ!  
বহুদিন হলো আর হয়না দেখা,
আটকে পড়েছ তুমি দেয়ালের ওইপারে,
অথবা বন্দী আমি প্রাচীরের ভিতরে!


যদি সব শূন্যতা শুষে নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে যাই,
লাল শিমুল পলাশেরা তখনো কি ফুটবে,
গোধুলিটা রক্তের মতো তখনো উছলাবে!
পৃথিবীর আয়ু যদি আমাদের আয়ুর মতো শেষ হয়,
কিংবা আমাদের আয়ু পৃথিবীকে,
তার সাথে নিয়ে পালায়,
দেখা কি হবে না আর কখনো ব্যস্ত রাস্তায়?
একটি জন্ম শুধু থাকে একবার,  
পরের সকল জন্ম মিশে যাবে এবারের ধুলায়,
দেখা কি হবেনা আর কখনো,
পুরানো পাটাতনে বসে বিকালের মেঘনায়!  


ব্যস্ত শহর স্তব্ধ হলো তো আজ,
অপারেশন থিয়েটারে তুলে তাকে,
এনেস্থেশিয়া দিয়েছে কেউ; মৃদু নড়াচড়া, মৃতপ্রায়!  
তবু কয়েকটা পাখি নিশ্চিন্তে পোকা খুঁটে খায়,
হয়তো অনেকেরই আর হবে না কখনো,
কালকের বাতাসের শব্দকে শোনা!
নেমে যায় জমা জল,
শব্দ তার চমৎকার কলকল, নূপূরের মতোন।
তোমার পায়ের আওয়াজ বহুদিন শুনিনা,
আর কি হবেনা শোনা কখনো!