রাত জেগে বসা আমি , কি ভাবছো?
ভালোবাসা নয়, ঘুম আসছে না-
আসবেই বা কেন; সারাদিন তেমন কিছু বা খেলাম কই- দুই চার বাটি মাংস, বিশ খানা
লুচি- পাঁচ বাটি আইসক্রিম ছাড়া;
দুপুরে তেমন একটা খাওয়া হয় নি-
ছোলে, বিরিয়ানি ছিল খুব হাল্কা।


ভয়ার্ত কন্ঠে উঠে বসি, ফোন বাজে-
কি শ্রুতিমধুর শোনায়, প্রথম ঐ বেজবেজে শব্দকে; এবার জমিয়ে, ফোনে আড্ডা দেওয়া যাবে।
ঘড়ির কাঁটাতে, তখন তিনটে বাজে। ফেসবুক চ্যাট হয়ে গেছে, হয়াটসআপের  গ্রুপের রাতের বন্ধু, বান্ধবীরা,  ঘুমিয়ে গেছে আমি জাগি একা!


ফোন এলো
- "ভালবাস? তুমি কি রাগ করবে?নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে, ভালবাসি, ভালবাসি।"


কথাগুলো দিয়ে আমার বন্ধু ঝন্টু শুরু করে। আমি একটু নড়ে বসি, ঝন্টুর তো শুনেছি একটি দারুণ সুন্দরী বৌ আছে। আমি আমতা, আমতা করি-
তখনই বলে- "তুই লিখতে পারবি?
যেমন লেখে, সুনীল গাঙ্গুলী? প্লেন ধরবো দুবাইয়ের জন্য। কবিতা পড়ছি, সবাই ঘুমে, শুধু তুই জাগা ওনলাইনে।
তাই ভাবলাম, বিরক্ত করি। এবার ঘুমা!"


ক্লান্ত আমি, অফিস, ঘর, একা সংসার নিয়ে, সবেমাত্র মাঝের বয়সে পা রেখেছি। একটু, একটু হাঁটুর ব্যথা, গাল, চোখে বয়স লুকোনোর ক্রিম লাগাচ্ছি। মাঝে, মাঝে অম্বল, পেটের রোগে ,ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত পীড়িত হচ্ছি।


তবুও কবিতার লাইনগুলো, সেই রাতে ঝন্টুর মুখে কেন যেন, নতুন বসন্তের আবেগ নিয়ে এলো... টেবিলে একটি ছবির কাচে, হঠাৎ
তোমার চেহারা,চোখের সামনে এলো। চুলগুলি কানের পাশে, এখন কেমন যেন পাক ধরানো! শরীরের ভাঁজে, তোমাকে যেন একটু বেশী ক্লান্ত দেখাচ্ছিল।


আচ্ছা- ভালোবাসি, ভালোবাসি..
এই কথা জানি, তুমি অনেকবার আগেও অনেকের মুখে শুনেছো। আমার মুখে, তোমার জন্য কি কথাগুলি আলাদা ছিল? কি জানি, আগে যদি পেতাম কবিতাটি, তোমাকে ছুঁয়ে জিজ্ঞাসা করতাম- আমার চারপাশে থাকলে, মিথ্যা বলতে পার না মোটেও জানি!  


তাই তো সেদিন, যেদিন অসুস্থ ছিলে তুমি; জ্বরে কপাল পুড়ে যাচ্ছিল, যেন আগুন লাগবে তখনি। মুখে নেই রুচি, তাই তোমার পছন্দের পায়স, বানিয়েছিল তোমার অনুভুতি- এই আমি! মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, তোমার স্বল্প চেতনায়, আর তোমার ব্যথায় ঝড়ে পড়ছিল, আমার দৃষ্টি।
তাকিয়ে বলি- সম্পর্কের আড়ালে-
"শুনছো সূর্য, চন্দ্র, তারায় ধনী; আমার আকাশকে আমি ভালোবাসি। ঠিক হয়ে পড় এখনি, লক্ষ্মীটি ! "


হঠাৎ ঘন মেঘ এলো তোমার মুখে, হাসপাতালের বাইরের বারান্দায়,
যেন ভুত দেখলে! আমি তোমার চাহনি চিনি; তোমার হাতটা আলতো করে জড়িয়ে বলি-
"ভয় পেও না, আমি তো আছি।"


নিমিষে, কাল বৈশাখী ঝড় নিয়ে, ঢুকলো তোমার স্ত্রী- শুনেছিলাম তোমাকে অনেক বছর আগেই, ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন উনি। তারপর তো কত শত ঘটনায় , তোমাকে পাই-আমার একাকী ছন্দে, তোমাকে ঝাপটে ধরি। এক আকাশ নতুন কাহিনী ভালোবাসার, তোমাকে নিয়ে বুনি। শুধুই চেয়েছিলাম দিতে মাধুরী; যা ছিল আমার,  শূন্য বুকের সম্পত্তি। আমার ভালোবাসা তুমি আসার আগে, বা পরে কেউ চায়নি, তোমার মত করে।


কিন্তু সেদিন, ঐ তোমার দেওয়া সম্পর্কের অধিকারের জোড়, জিতে গেল। আমার নামহীন সম্পর্ক  'শুধুই ভালোবাসা' হয়ে তলিয়ে গেল! তোমার স্ত্রী, দারুণ উদ্বেগ দেখিয়ে , তোমার দিকে এলো। ধীরে,ধীরে আমাদের কথা - জাগতিক জীবন থেকে বিদায় নিলো।


চুপ করে থাকলে তুমি, যখন আমি বলি- "উঠি"? তোমার স্ত্রী হয়তো জানতেন, তোমার, আমার কথা- তাই এগিয়ে দিতে এলো। দরজা খুলে, মুখের সামনে বলল, "আশাকরি আর দেখা হবে না। "


সেদিন, অনেক কেঁদেছি, আকাশ শোনাচ্ছিল - চিল, শকুনের আর্তনাদের কাহিনী। খান, খান হয়ে কেটে যাচ্ছিল, ভালোবাসাগুলি। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে, সে ছাড়া কে বা আমাকে চিনে, মা সব শুনে বলে- "একেই তো মেয়ে পাগলী সমাজ পরকীয়া বলে।"


তুমি ছিলে , আছো- ভালবাসি, ভালবাসি আছে, এই ভেবেই দিন, কাটালাম এতগুলো।
এখন তো নিরবিছন্ন, ক্ষ্যাপা, উন্মাদনায় মেতেছি। ভালোবাসার লোকের দূরে যেতেই , ভালোবাসাতে রোজ একটু, মৃত্যু ভালোবেসে, একটু করে জীবনের কাছে যাচ্ছি।


কত কথা রোজ বলি- রাতে, দুপুরবেলায় অলস আলোতে, পথের সাথে ঝিঁঝিঁপোকার কানে। সবকিছুতেই তুমি আছ এইভেবে...


সুনীল গাঙ্গুলীর লাইনগুলো, ফোনে মনে করিয়ে দিল ঝন্টু, আমার ছেলেবেলার বন্ধু- 'ভালোবাসা, ভালোবাসি' কবিতা মন হল-  তোমার স্মৃতিতে জীবন আমার, দারুণ ভাগ্যের চুমুতে আঁকা।