বিশ্বাস যদি করতে পার- কর;
এখন যখন সামনে দূর দিগন্ত দেখে-
কেন যেন তোমার রামধনু খোঁজে মাটি।


মাটিই তো নাম ছিল তাঁর- খুব আদরের ধন ছিল মা, বাবার ।
কিন্তু ঐ সময়, ভেবেছিল কি তাঁরা,
সহ্য করতে হবে তাঁদের মাটিকে,
স্বপ্ন নিয়ে পায়ের নীচে দ'লে যাওয়া ব্যথা!
কতবার মাটির চোখে, অভিমানী জল দেখে - বাবা, মা ছেড়ে দিয়েছিল খাওয়া, দাওয়া।


ঐ দিনগুলোর কথাই ছিল আলাদা, খুব কাছে মাটির চলতো, সজীব প্রাণ নিয়ে মাটির ছোট্ট বোন, মায়ের প্রিয় বাপুদাদা-
মাটি শুধু বলত তাঁকে লোকের অগোচরে - সংক্ষেপে সূর্য ছটা।
মাটি তো দিন, দিন বড় হচ্ছিল-
সূর্য মেখে চলছিল- ঐ বাপুর বাড়িতে ছিল অবাধে আনাগোনা।


শেষে এল সেই দিন- বাপুর দেরাজের কোণাকুণি জানলার পাশে, রাখা ছিল একটি ছবি রঙিন।
খুব বিরক্ত হয়, ছবি দেখে মাটি- দেরাজের পাশে বাপুকে বলে-
"কে এই মহিলা, সুন্দরী।"
বাপু হেসে বলে যা- হাজার খণ্ডে বিভক্ত করে মাটির স্বপ্ন, সুখ, ইচ্ছে, তাঁর একমাত্র  ভালোবাসা।
পাষাণ হয়ে শুনে- বাপুর মনের মন্দির জুড়েছে সুন্দরী; ছবিতে আছে যে।


সহিষ্ণুতার পাঠ মাটির রক্তে,
সে তো সব সহ্য করে হাসে-
তবুও চোখের জলকে গলায় ধরে কিছু মিথ্যে হাসি মুখে জড়িয়ে বলে-
"বাপু আমার সূর্য ছটা- ভোর হয়ে এসো রোজ এই মাটির পাহাড়ে, খুশি আমি শুভেচ্ছা।"


এই তো সেদিন, অনেক বছর পরে- আমিও দেখি; মাটিকে।
বানিয়েছে সে একটি আশ্রম,
প্রয়াত  বাবা, মায়ের নামে,
তাঁর নীলাচল পাহাড়ের বাড়িতে ।
যেখানে ওর মত ছেড়ে দেওয়া মানুষেরা,   বৃদ্ধ বয়সে এসে শেষ ঠিকানা পেয়েছে।  
মাটি ভালো বাসা দিয়েছে, সবাইকে 'নিকুঞ্জে', যদিও তাঁর ভালোবাসা একতরফা রয়ে গেছে জীবনে !


'নিকুঞ্জের' পাহাড়ের ধারের ঘরটিতে-
একমাত্র পুত্র আর পুত্রবধূর অবহেলাতে, বাপু এসেছে থাকতে তাঁর সুন্দরী স্ত্রী, নীলার মৃত্যুর পরে।
মাটি তাঁকে সাদরে স্থান দিয়েছে,
নিজের নিকুঞ্জে।
শুনেছি রোজ সকাল, বিকেলে-


দুজনে মাথার একরাশ পাঁকা কাঁচা চুলে, বাপুর চোখের মোটা চশমার তলে,
আর মাটির ছলছল চোখে,
রোজ সূর্যকে উঠতে, আর ডুবতে দেখে- হাতে, হাত ধরে বারন্দায় বসে।


কি জানি কি অঙ্গীকারে, একে অপরকে বাঁধে, সূর্য ছটার রঙিন আচ্ছাদন বুকে লুকিয়ে।
চাওয়া, পাওয়া, হারিয়ে খুঁজে পাওয়াকে- পিছনে ফেলে-
আকাশ, বাতাস, পাখির ডাক, বিশাল পাহাড়ের গাছ; 'নিকুঞ্জের' পাশের নদীকে সাক্ষি রেখে-
অজানা  চিরসত্যের সন্ধানী আলোতে।
*************************************