সূর্য উদয় হয়নি তখনো পূর্বাকাশে
মাত্র লাল আভাটা প্রস্ফুটিত হয়েছে যেনো।
ফুলবানুর কানে ভাসে “জয়বাংলা” “জয়বাংলা”
ছোট্ট গাঁ খানা যেনো আনন্দ সাগরে ভাসছে
চারদিকে হই-হুল্লোড়, সাজ সাজ রব।
মলিন শরীরে হাসিমুখে মুক্তিযোদ্ধাঃ কাঁধে বন্দুক
মাঝে-মধ্যে পটপট আওয়াজে প্রকম্পিত গোটা গাঁ।


এই কলসুম উঠ, দেশ স্বাধীন হইয়া গেছে
মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে ফিরে আসছে
আমার ‘সবুজও’ আসবে, হাতে বন্দুক
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে-মা আমি এসে গেছি
দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর আমাদের কোন দুঃখ থাকবেনা তুমি দেখে নিও।


দোসরা, তিসরা………এইভাবে যায় ষোল, সতের, বিশ, পঁচিশ
সবুজ আসে না।
ফুলবানুর মনে আশংকা জাগে
তবে কি আমার সবুজ ! না এমন অলুক্ষণে কথা মুখে আনতে নেই।
আমার ‘সবুজ’ আসবে, পতাকার রঙে তার নাম।


ত্রিশ তারিখ সন্ধ্যায় হঠাৎ ভীনগাঁয়ের রশীদের কাঁধে ভর করে
কেউ উঠোনে এসে দাঁড়ালে কলসুমের চিৎকার
মা !ভাইয়া এসেছে।
আনন্দের আতিশয্যে বের হয়ে দেখি-
আমার ‘সবুজ’ এসেছে। কিন্তু একটা পা রেখে এসেছে যুদ্ধের ময়দানে।
ফুলবানু দৌড়ে গিয়ে কাটা পা দেখে হাউমাউ করে কেঁধে ওঠে-
ওরে আমার খোকা ।


রশীদ আর সবুজ শান্তণা দেয় ফুলবানুকে
দুঃখ করো না, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের আর অভাব থাকবেনা।
এক সময় ফুলবানুর মনেও বিশ্বাসে ভর করে
সত্যিই তো,
স্বাধীন দেশে পা হারানো মুক্তিযোদ্ধার অভাব কিসের?


ফুলবানু এখন আর বেঁচে নেই
এক পা নিয়ে ভিক্ষা করতে করতে রোগাক্লিষ্ট ‘সবুজ’
নিয়তির দয়ায় টিকে আছে।
আজ চল্লিশ বছর পর কুলসুম ভাবে-
ত্রিশ ডিসেম্বর সেদিন মায়ের আশংকাটা ছিল এক নির্মম সত্যি।
‘সবুজের’ সবুজ পতাকায় মোড়ানো রাজাকারের গাড়ি
আর নির্লজ্জের মত দাঁড়িয়ে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি।