আমি ফুলমতির মেয়ে দ্রৌপদী ।
আমি বেজন্মাও নই, সস্তাও নই ।
শহরের ঘুনধরা পোকাদের মাঝে হারাতে আসিনি ।
শুনেছি, বাবা আমার শহুরে ছিল, তোদের মতই সভ্য ।
শহরের সুন্দর সু-পুরুষ ।
পলাশের আঙিনায়, ছৌনাচের হাত ধরে এসেছিল প্রেম ।
মা আমার ফেরাতেই পারেনি।
আমার মা বলে, প্রতিশ্রুতির বাসর ঘরে আমার জন্ম।
ঘটা করে না হলেও, জানান দিয়ে বিয়া হয়েছিল আমার মায়ের।
মুখোশের মাঝে বড় হয়েও, মুখোশ পরা মানুষটকে,
মা আমার চিনতেই পারেনি ।
চামড়া আমাদের কালো হলেও, মনটা এখনো আমাদের কালো হয়ে যায়নি রে ।
আমি ফুলমতির মেয়ে দ্রৌপদী ।
আমি বেজন্মাও নই, সস্তাও নই ।
আমরা কষ্ট মাখি বুকে, হাসি মাখি মুখে ।
কাঁকর বিছানো রাঙ্গা মাটির পথ ধরে আমাদের নিত্য যাতায়াত ।
রাস্তার পাশে ঝুঁকে আছে গাছ ।
শাল, শিমুল, পলাশ আর সবুজের গুল্ম ।
তোদের নাম দেওয়া, আদিবাসী জাতি আমরা ।
আমরা গর্বিত, জঙ্গলে মোদের বাস ।
মাটির মাঝে, মাটির ঘরে, মাটির সাথে থাকি ।
সেই মাটির মায়ের কষ্ট হলে, পাগল হয়ে ছুটি ।
আমাদের কাছে শরীরের মূল্যর চেয়ে, মনের মূল্য অনেক বেশি ।
আমরা জানি শিরদাঁড়াতে একবার ঘুণপোকা লাগলে,
মানুষ আর সোজা হতে পারে না ।
তাইতো, আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, আয়নার সাথে কথা বলতে পারি ।
আমি ফুলমতির মেয়ে দ্রৌপদী ।
আমি বেজন্মাও নই, সস্তাও নই ।
হতেপারে, অভাব আমাদের সাথী,
তবু সম্মানের সাথে বাঁচি ।
আমাদের পুবের আকাশ ফর্সা হয়, পাখিদের কলতানে ।
মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি, কিংবা মসজিদের আজানে ।
শিশির ভেজা ঘাস, নীল আকাশ আর প্রাণচ্ছল উচ্ছাস ।
আমরা এভাবেই বাঁচি বারো মাস ।
প্রকৃতি আর আমরা কোলাকুলি করে নিই, শ্বাস-প্রশ্বাস ।
তাই, পথের মাঝে ধুলো পড়লেও,
তোদের মতো, মনের মাঝে ধুলো এখনো পড়েনি ।
আমি ফুলমতির মেয়ে দ্রৌপদী ।
তোদের মত শহুরে, উচ্চশিক্ষিত হতে না পারলেও,
মানবিকতার শিক্ষায়, তোদের থেকে অনেক উঁচুতে আমরা থাকি ।
আমার পরিচয়, আমার ভাষা, আমার কথা, আমার গায়ের রঙ,
তোদের কাছে পরিহাসকর মনে হতে পারে ।
তবু, জেনে রাখিস, সিধু কানুর জঙ্গলের মেয়ে আমি ।
অন্যাই-এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা আমাদের অভ্যাস ।  
অভাব আমাদের নিত্য সাথী, কষ্ট সহি মনে,
সম্মানে আঘাত হানলে, বাঘিনী জনে জনে।
ভালোবেসে জীবন দেবো, ঠকালে নেবো প্রাণ ।
গোঁয়ার লোকে বলে বলুক, জঙ্গল মোদের জান ।
- ফারুক মল্লিক (সত্ব সংরক্ষিত) সময়কাল – 25/12/2023