প্রাসাদটাকে ঘিরতে হবে রাজার হলো খেয়াল,
রাজমিস্ত্রি তলব হল গড়তে রাজার দেয়াল l
দেয়াল ভেঙে মিশলো ভূমে দিন দুয়েক পরে;
বললে রাজা, পাকড়ে আনো, চড়াও শূলে ওরে l
মন্ত্রী বলে,”দেখেছিলেম ওর গালে আঁচিল,
তখনই তো জানতেম, ভাঙবে এবার পাঁচিল।”
মিস্ত্রি বলে, “আমার কী দোষ? চড়ব কেন শূলে?
ভাঙল দেয়াল মশলা মাখার লোকের কাজের ভুলে”l
বললে রাজা, “আনো তবে সেই ব্যাটাকে ধরে” l
সে এসে কয়, “মশলা যখন মাখছি যতন করে;
সামনে আমার দৌড়ে গেল হঠাৎ একটি মেয়ে;
গোল বাধালো মশলা মাখায়, আমায় চমকে দিয়ে”l
কহেন রাজা, “সেই মেয়েটাই তবে আসল দোষী;
আনো তাকে এইখানেতে, দেবো তারে ফাঁসি”l
মেয়ে কেঁদে কয়, “গড়তে দিলাম মুক্তোর দুল জোড়া,
সময়ে স্যাঁকরা দিল না সেটা, দিতে গেলাম তাড়া l
যাব চলে মামার বাড়ি, আনতে গেলাম দুল;
দোষ হলে তা’ স্যাঁকরার, আমার কিসের ভুল?”
কহেন রাজা, “আসল দোষী তবে ব্যাটা স্যাঁকরা,
মোর দেয়ালের মশলা মাখায় বাঁধিয়েছে ফ্যাকরা”l
রাজার কথায় তাকে ধরে আনল যত লোক;
সে এসে কয়, “বিচার হলে ন্যায্য বিচার হোক।
ঠিক সময়ে তৈরি ছিল মুক্তছাড়া দুল,
দেয় নি মুক্ত ডুবুরি, আমার কিসে ভুল?”
রাজা বলেন, “কোথা সেই শয়তান ডুবুরি?
তার তরে ভাঙলো দেয়াল, ফাঁসাবো তার ভুঁড়ি” l
সে কেঁদে কয়, “মুক্তো তুলতে গেছি সাগরতলে,
কিন্তু মুক্তো কোথায় পাব শুক্তিতে না হলে?
দোষী যদি হবেই কেউ, দোষী তবে শুক্তি;
রাজামশাই পায়ে পড়ি, দিন আমারে মুক্তি” l
“শুক্তিকে কী শাস্তি দেব?” বললে রাজা হেসে;
“সক্কলকে মুক্তি দিলাম”, বললে অবশেষে।
                  —০০০—