একাত্তরের একটু আগে, ষোলো বছর বয়সে।মেহেদী রাঙ্গিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে,কত স্বপ্ন সাধ আহলাদে আঁকে,
হারিয়ে গেল তা কোথায় কোন ফাঁকে –


যুদ্ধে এখনও বইছে
যেন যুদ্ধে রচিত জীবনধারা,
বিজয়ে সবাই হাসে
উঠে না তাদের শুকতারা।


হানাদারের লালসায় তৈরি
মনের সাথে দেহের বৈরি,
যুদ্ধ ভরেছে মনের ব্যথা
নির্যাতনের বিষাদগাঁথা।


সময়ের লাঞ্চনা হাহাকারের বঞ্চনা
বুক ভেঙ্গে যায় কেঁপে কেঁপে ওঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা
ও আমার মা জননী বীরাঙ্গনা।


একাত্তরের মে মাস , রাজাকারেরা এসে
তুলে দেয় হানাদারের কাছে ঠেসে,
তিন দিনের লাল নীল
রঙের দংশন রাত্রি,
আকাশ ভারী বাতাস ভারী
কাঁদে ক্যাম্প শিয়ালডাংগী।


অশ্রু ঝরে রক্ত পরে টাটকা
নির্যাতনে নির্মমতায় আটকা
নয় মাসে নির্যাতনের মেলেনা অংক
দুঃসহ স্মৃতি দুর্বিষহ অসংখ্য।


সময়ের লাঞ্চনা হাহাকারের বঞ্চনা
বুক ভেঙ্গে যায় কেঁপে কেঁপে ওঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা
ও আমার মা জননী বীরাঙ্গনা।


কিনেছে অমূল্য দামের রক্তে
ভিত গড়েছে গড়েছে শক্তে
বীরকন্যার আত্মত্যাগে পবিত্র মাটি
তোমাদের অমুল্য দামেই খাঁটি।


সময়ের লাঞ্চনা হাহাকারের বঞ্চনা
বুক ভেঙ্গে যায় কেঁপে কেঁপে ওঠে
আমার মা জননী বীরাঙ্গনা
ও আমার মা জননী বীরাঙ্গনা।



(১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বীরাঙ্গনা টেপরি রানী যার পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাররা ইচ্ছামতো নির্যাতন করত। সবার কথা চিন্তা করে সব মুখ বুজে সহ্য করেছেন। তাকে মেরে ফেলার জন্য তিনি পাকিস্তানী সেনাদের বারবার আকুতি করেছিল কিন্তু তারা তা করেনি। আত্মহত্যা করে জীবন বিপন্ন করতে তিনি চাননি। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বারা গ্রামের টেপরি রানী যিনি একজন বীরাঙ্গনা মা জননী তার প্রতি বিনম্র সালাম, জাতি আপনার এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে ,


মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ৪১ বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৪ বছর পর একাত্তরের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নির্যাতিত বাংলার বীরাঙ্গনারা এই প্রথমবারের মতো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেন। বীরাঙ্গনার মৃত্যুর পর তার দাবিদাররা গেজেটে নাম প্রকাশের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন। এর আগে কোন সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির কথা ভাবেননি। এর মাধ্যমে বাঙালী জাতির বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হলো)