বিনম্র আকুলতা
------------------------#বাসব রায়
                  


বিদ্রোহ- প্রেম- ভালবাসার মূর্ত প্রতীক আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ।দরিদ্র ঘরে জন্মগ্রহণ করেও স্বীয় মেধা ও মননশীলতার কারণে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে এক অনন্য স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন।


এ উপমহাদেশ যখন বিদেশী শাসন শোষণে জর্জরিত , স্বাধীনতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত ও নিগৃহীত তখন বিদ্রোহী কবির লেখনীতে ক্ষুরধার বৈপ্লবিক এক বলিষ্ঠ চেতনার উন্মেষ ঘটে -
'' বল বীর -
বলো চির উন্নত মম শির ---"
দেহ মনকে উজ্জীবিত করবার এমন শক্তিশালী কণ্ঠস্বর কেবল নজরুলের ক্ষেত্রেই মানায় । পরবর্তীতে আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর গান ও কবিতা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভীষণ ভাবে অনুপ্রাণিত করে -


''কারার ঐ লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট ''
'' দূর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্থর পারাবার হে '
'' শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল পরা ছল ''.....


ইত্যাদি গান ও কবিতার সরব জীবন্ত অনুভূতি বীর বাঙালিকে দেশাত্মবোধে চরমভাবে উজ্জীবিত করে এবং এ কথা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য যে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষায় কলজয়ী এসব লেখনী অপরিসীম অবদান রাখে । তাই তো আমাদের চির প্রেরণার কবি কাজী নজরুলের কাছে আমাদের অশেষ ঋণ।


শিশুতোষ ছড়ায় কবির অনবদ্য লেখনী --


'' বাবুদের তালপুকুরে
হাবুদের ডালকুকুরে
সে কী বাস করলো তারা ''...


ধর্মীয় গজল ও ভজন নজরুলের লেখনীতে সম্পর্ণ নতুন মাত্রা পায় -


'' রমজানের ঐ রোজার শেষে
এলো খুশীর ঈদ ''
'' মসজিদেরই পশে আমায়
কবর দিও ভাই '' প্রভৃতি


'' ব্রজগোপী খেলে হোরি
হোরি রে ''


'' সখী সে হরি কেমন বল ''
''ওরে নীল যমুনার জল
বলরে মোরে বল....''
এসব গানের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে  নজরুল করেছেন সমৃদ্ধ ।


মানবতার কবি নজরুল , সাম্যের কবি নজরুল , অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি নজরুল বলেছেন
-
'' গাহি সাম্যের গান
মানুষের চেয়ে নাই কিছু বড়
নহে কিছু মহীয়ান ''


নারী- পুরুষের বৈষম্যের ঘোরতর বিরোধী কবি লিখেছেন-


'' জগতে যা কিছু মহান সৃষ্টি ,চির কল্যানকর
  অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর ''......


'' অসতী মাতার পুত্র যদি জারজ সন্তান হয় ,
  অসৎ পিতার পুত্রও তবে জারজ সুনিশ্চয় ''


সকল ধর্ম ও মত সম্পর্কে কবির ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য । বিভিন্ন ভাষায় তাঁর অসাধারণ দক্ষতা যা বাংলা সাহিত্যে অন্য কবি বা লেখকদের মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না ।


বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে বিদগ্ধ  কবি নজরুলের সরব ও সাবলীল উপস্থিতি নেই । আমাদেরকে সাহিত্যের যে সম্ভার তিনি দান করে গেছেন তার তুলনা নেই । কবি নজরুলকে নিয়ে কিছু লেখা আমার ক্ষেত্রে এক চরম ধৃষ্টতা তাই পাঠকদের কাছে বিনীত ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আর এত স্বল্প পরিসরে কবিকে নিয়ে লেখা যায় না কারণ তাঁর পরিধি , তাঁর বিস্তৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আমার নেই ।


নজরুলকে জানতে হবে , নজরুল সম্পর্কে শিখতে হবে , তাঁকে নিয়মিত গভীর অনুশীলনের মাধ্যমে অনুধাবন করতে হবে । আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে চির আধুনিক কবি নজরুলের চেতনাকে ..... এ আমার বিনম্র আকুলতা ।।