শোভিছে  তরুরাশি পথের দুপাশে প্রবেশিবে সে পথ গহন বৃন্দাবনে,
পথের প্রান্তে কুলুকুলু ধ্বনিতে  বহিতেছে নদী যমুনা ॥
যমুনার জল করে টলমল তীরে বাঁধা ছোট তরী
কানাই বিরাজিছে তাতে হাতে নিয়ে তার বাঁশরী॥
কত চেষ্টা করি ,তবু সুর নাহি লাগে আজ, তার বাঁশিতে।
দূরে চড়ে ধেনু -- অনতি দূরে কদম্বছায়ায় বসে রাখাল বালকেরা
করিছে ভোজন দ্বিপ্রহরে,ডাকে তারা কানাই কানাই বলে
কোন শব্দ নাহি পশে তার কর্ণকুহরে।
দিন শেষে আঁধার নামে, ধেনু সব ধরে পথ ঘরে ফিরিবারে,
নেই কোন হুঁশ কানাইয়ের॥
তখন ছিল যত রমণী আভীরপল্লির ঘরে জ্বালায় সন্ধ্যা প্রদীপ
শঙ্খর ধ্বনিতে করে মুখরিত চারিদিক –
সূচিত করে শুভ সময় সমাগত প্রায়।
কেবল একটি ঘরে বিরাজিছে নিস্তব্ধতা  
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলেনি তখনও,
সেথায় আয়ান ঘরনী রাধা পূজার্চনায় রত- বেশ তার এলোমেলো,
দূর থেকে ভেসে আসে বাশিঁর আওয়াজ
রাতের আকাশে আজ পূর্ণিমার চাঁদ
ভেঙে দিয়ে সব সংকোচ
ঘর থেকে বেরিয়ে রাধা ধরেছেন বনপথ॥
কানাই যে ডাকিছে তাকে কেমনে করিবে তা উপেক্ষা ?
পথের দুধারে তরুরাশি সরে সরে যায়
শত শত জোনাকি জ্বালিয়ে নিজের আলো
রাধাকে পথ দেখায় -- রাধা চলেছেন আজ অভিসারে।
প্রেমের আবাহন করিছে যে বংশীধারী
কেমনে উপেক্ষিবে  তা রাধা ?
কেমনে সহিবে রাধা সুরের ঝঙ্কার
বিগলিত করে যা পাষান অন্তর ?
করিয়া জয় সর্ব লাজ ভয়,
প্রবেশিলেন রাধা ধীরে   যমুনার তটে
আলিঙ্গনাবদ্ধ হইলেন তিনি কৃষ্ণ বাহুডোরে
পুণ্য  হইল  তট যমুনার
উদ্ভাসিত হইল যুগল, আপন জ্যোতিতে॥