চতুর্দিকে চমৎকার রোদ্দুর আর রোদ্দুর
নির্মেঘ আকাশ আরও মধুর দূর-বহুদূর
নিঃসঙ্গ বুকের অরণ্য। এ’মন কার জন্য
ঠোঁটে বাজে রঙিলা পাগল বাঁশির সুর।  
যেন
বসন্ত এসেছে সমগ্র ঘর জুড়ে দ্বিরাগমনে
ছন্দিত চরণে ছন্দিত রমণে,মনের গহনে।  


ধুলো মাটির সোনার রেণু  উড়ে যায়
মনের গহিন বসন্ত ছোঁয়ায় ভরে যায়।
সমস্ত গাছপালা ঝলমল
নদ-নদী-সরোবর টলমল
একান্তে প্রকৃতির প্রান্তিক মুগ্ধময়।
বর্ণময় রঙে বসন্ত চরাচর শুদ্ধময়।  


দু’চোখে এ’কেমন ভোর আসে,
সূর্যের রং লেগে সুদূর আকাশে
স্তব্ধতার আকুলতায় সন্ধ্যা নামে
পরাণ ভগ্ন-স্তূপে জোৎস্না-আলো
অজন্তা ইলোরার নিষ্পাপ-কামে
উৎসব পার্বণে শ্বাস জুড়ালো।  


এরই নাম বোধহয় ভালোবাসা।  আঁচল পাতা ।
হৃদয়ের খড়কুটোয়  এক সুতোয়  বেঁধে  যাওয়া
শীতের শীতলতা ফুরোয় এ’কোন বসন্তের ছোঁয়ায়
আঁচ-লাগা বসন্ত কুড়োয় উষ্ণতার অনিন্দ্য ধোঁয়ায়  
যাযাবর শরীর। তৃষ্ণায় অস্থির  
দু’কুল মরুঝড়। পোড়াকাঠ খড়।
দু’হাতে ভরে নিলাম আগুন
দুর্নিবার হাওয়ায় নিবিড় যাপন
গুলাল গুলালে গুমর ফাগুন  
নিঃশ্বাসের তরঙ্গ রঙ্গিলা আপন।


আমার ভাবনা বসন্তের ঘর-দুয়ারে এসে দাঁড়ায়
দু’চোখ দিয়ে জড়ায়। আলিঙ্গনের দু’হাত বাড়ায়
হয়ত ফুটবে না  ফুল আর পাথর চিরে
হয়ত গাইবে না পাখি গান কারও নীড়ে  
হয়ত আসবে না প্রজাপতি সবুজ ভিড়ে
তবু তোমাকে ছুঁয়ে আমার সমস্ত বেলাভূমি
উচ্ছ্বাসের ঢেউএ ধুয়ে  বসন্তের দিগন্ত চুমি।  


দিন রাত শুনি দু'জনে
বসে মুখোমুখি আনমনে
উদ্বেল সমুদ্রের সংলাপ আর বসন্তের বিলাপ
গাছপালার সবুজ উপড়ে দিয়ে কেন আসি বারবার
ইটপাথরের অট্টালিকায় প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ছারখার।


বসে স্মৃতির বারান্দায়  
কেন মনে হয় আজ বোধহয়, এই  মাটি জল হাওয়ায়
মানুষ-নির্মিত বসন্ত দুঃখময় আরও ক্লেশময়
আরও বেশি চৌচির আরও অলীক কল্পনাময়
শুকিয়ে কুঁকড়ে তছনছ,পড়ে আছে নিথর অবহেলায়
শুধু দিনক্ষণ দেখার ক্যালেন্ডারের জমকালো পাতায়।


প্রকৃতির পিছুটানে নিঃশব্দে দিন চলে যায়
ভাঙছি পাথর নিত্য নতুন অনুভূতির খেলায়
হিসেব নিকেশ সম্পর্কের বোঝা আসে যায়
প্রার্থনা হয়ে বসন্তের পিপাসায় গলা মেলায়।