আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে
শরতের আকাশে নীল সাদা মেঘের ভেলা।
মাটির আকুলতা। শস্যের শ্যামলতা।  সবুজের মেলা।
চতুর্দিকে একতা পুনর্মিলনের আগমনী সুর ভেসে আসে।
ঘরে ঘরে শিউলি ফুলের মনোময় সুবাস। হিমেল ছোঁয়া বাতাসে।
স্নিগ্ধ কোমল পরশ, শিশির বিন্দুর সরস পরতে পরতে দূর্বা ঘাসে।
প্রকৃতির প্রণীত কোলে, কাশফুল দোলে বিনোদিত উল্লাসে।
যেন আজ নিমগ্ন ত্রিভূবন। অপার মহিমা মৃন্ময়ীরূপ দেখার আবেগ বাসনায়  
এ’পুণ্য তিথিতে সারা জগত চরাচর তীর্থ, আকুল আনন্দোচ্ছল উপাসনায় ।  


তুমি মহামায়া সনাতনী। শক্তিরুপা। মহাবজ্ররুপিনী।
গুণময়ী। জগত পালনকারিণী মমতাময়ী মাতৃরূপিণী।
মহালক্ষ্মীরূপিনী। সমস্ত চরাচরে পূজিতা দেবী নারায়াণী।
মানুষের অন্তরে অন্তরে বহুরূপে তোমার অধিষ্ঠান জানি।
কখনও ক্ষান্তিরূপে,জাতিরূপে, লজ্জারূপে, শক্তিরূপে, শান্তিরূপে
কখনও শ্রদ্ধারূপে, কান্তিরূপে,  লক্ষ্মীরূপে, বৃত্তিরূপে,  স্মৃতিরূপে
কখনও দয়ারূপে,তুষ্টিরূপে,মাতৃরূপে, ভ্রান্তিরূপে, দেবী দুর্গারূপে
আবির্ভূতা এক মহাশক্তি মহামায়া।


তুমি জগজ্জননী।        অপার পরমা প্রকৃতিরূপে পূজিতা।
ভিন্ন ভিন্ন নাম-কীর্তনে অভিহিতা। বিশ্বচরাচরে সুসজ্জিতা।


তুমি নির্মলা কুমারী রূপধারিণী ।
কখনও নৃমুণ্ডমালিনি চামুন্ডা। তুমিই তমোময়ী নিয়তি। দশপ্রহরণধারিণী
তুমি শত্রু দহনে অগ্নিবর্ণা। অগ্নিলোচনা। চৈতন্য শক্তির রূপান্তরকারিণী।
কখনও জয়দুর্গা,জগদ্ধাত্রী,গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা,কখনও কাত্যায়িনী,যোগনিদ্রা কালী, গৌরী
কখনও জলোদরী,শ্যামা, বৈষ্ণবী,অন্নদা,কখনও আনন্দময়ী,শাকম্ভরী, কৌশিকী,
ভ্রামরী।


কখনও মহিষ-মর্দিনী,শূলিনী,ভারতী,অম্বিকা কখনও গিরিজা, বৈষ্ণবী পার্বতী, কালিকা,
কখনো কৌমারি, বাহারী, চণ্ডী, লক্ষ্মী, উমা,কখনও হৈমবতী, কমলা, শিবাণী, বালিকা।


দুর্গার সমস্ত অস্ত্র-শস্ত্র-বাহন-যান
নর দেবতারাই  করেছেন প্রদান।
নারীর দেহে পুরুষ শক্তির অবদানে, আবির্ভূতা রক্ষাময়ী দুর্গা দুর্গতিনাশিনী।
দশভূজা দশদিক উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতির প্রতীক। ঘর-সংসারের মঙ্গলকারিণী।  
পূর্ব-পশ্চিম,উত্তর-দক্ষিণ, ঈশান,বায়ু, অগ্নি,নৈর্ঋত, ঊর্ধ্ব ,অধঃ দশপ্রহরণ ধারিণী।


দেবগণের অস্ত্র সৌজন্যে দুর্গা মহামায়ার শক্তি। অশুভ অমঙ্গল বিনাশকারিণী।


মহাদেব দিলেন ত্রিশূল৷ যার তীক্ষ্ণফলা ত্রিগুণের নিদর্শন।। সত্ত্ব,রজঃ,তমঃ।
বরুণদেব দিলেন শঙ্খ। যার মঙ্গলময় ধ্বনি সৃষ্টির প্রাণ সঞ্চারিণী। জন্মদাত্রী সম।  


বিষ্ণু দিলেন চক্র৷ পরিক্রমার সমস্ত সৃষ্টির বিন্দুতে অস্তিমান কল্যাণময়ী জননী।
যমরাজ দিলেন গদা । সততা,ভালোবাসা,ভক্তির কেতন সমৃদ্ধি সম্পূর্না ধরণী।

দেবরাজ ইন্দ্র দিলেন বজ্র । দৃঢ়তা ও সংহতির নিদির্ষ্ট লক্ষ্যের প্রতি নিষ্ঠাপরায়াণ
নাগরাজ দিলেন সর্প । বিশুদ্ধ চেতনার ও বোধিসত্বের জীবন্ত প্রমাণ বিরাজমান ।


সিদ্ধিদাতা গণপতি দিলেন খড়্গ। বিবেক বুদ্ধির প্রতীক৷ অশুভকে করতে জয়
পরম মোক্ষের  নিদর্শন। সাহস আত্মশক্তির পরিচয়। সতত উদ্যত ময় অভয়।


পবনদেব দিলেন ধনুর্বাণ। শক্তির নিশান। সহজাত শক্তির প্রকাশ ধনুষ্টংকার।
অগ্নিদেব দিলেন অগ্নি । জ্ঞান-বিদ্যার উজ্জ্বল সঞ্চার । নির্মূল করে অহংকার।  


সূর্যদেব প্রদান করেন কাঞ্চন বর্ণের সৌন্দর্যময় আলোকিত দ্যুতির স্নিগ্ধ আভা ।
কুবের অলংকৃত করেন রত্নহার ভূষণ অলঙ্কারে। চোখ জুড়ানো রূপের শোভা ।  
করুণাময়ী ধারিত্রীদেবীকে চন্দ্র দেব দিলেন জ্যোতির্ময়ী কোটি কোটি চন্দ্র প্রভা
স্নেহমাখা মমতায় কন্যা,জায়া জননী এক অপূর্ব রূপের মুগ্ধতার পুণ্যতর আভা।  


বিশ্বকর্মা দিলেন দুর্ভেদ্য কবচ-কুণ্ডল আর অক্ষয় বস্ত্র। কুঠার ও ঢাল।  
হিমালয় দিলেন সিংহ। তেজ আর শক্তির পূর্ণতায় মহীয়ান সর্বকাল।  


দেবতাদের সঙ্ঘবদ্ধ তেজ-মহাশক্তি-মহামায়ায়, দুর্গা দুর্গতিনাশিনী
রণদুন্দুভিধ্বনিতে সিংবাহিনী, চন্দ্রমুকুটধারিণী, শঙ্খচক্রত্রিশূল ধারিণী
অপার রূপে রণচণ্ডী মহিষাসুরমর্দিনী। শক্তিশালিনী, সর্বমঙ্গলা বিপত্তারিণী ।
প্রকৃতিসরুপিনী পরমেশ্বরী, করুণাময়ী, শান্তিদায়িনী, কল্যাণকারিণী।  


শান্তি ও সংগতি
জীবনের মর্মগতী
শঙ্খধ্বনি উলুধ্বনি ঢাক ঢোল কাঁসর মন্দিরার ঝনৎকার
মাতৃবন্দনায় নিমগ্ন চিত্ত। দুর্গার শরণে সারা জগৎ সংসার।


বিকাশ দাস / কলকাতা