কথা উঠতেই পারে সাধারণ ব্যাকরণ জ্ঞান এবং বানানরীতি নিয়ে কিছু লেখাপড়া করে নিলেই হয়। সেটা করেও কি পুরোটা সফল হওয়া যাবে? বাংলা একাডেমি  প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানরীতি হাতের কাছে রেখেও কতটা সুফল পাওয়া যায়? এই যেমন আমার ক্ষেত্রে যেটা ঘটে তা হলো আমি অনলাইনে  'গুগল ট্রান্সলেট' দিয়ে বাংলা টাইপ করি।পূর্বেই উল্লেখ করেছি বাংলা কী বোর্ড এর ব্যবহার জানা নেই বিধায় 'গুগল ট্রান্সলেট' এর আশ্রয় নিয়ে আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে এই কাজটি করে যাচ্ছি। আমার মত হয়তো অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কম্পিউটারে বাংলা লেখার কাজটি করে থাকে।এই ক্ষেত্রে যেভাবে শব্দটি উচ্চারণ করি ঠিক সেই ভাবেই ইংরেজি বর্ণ টাইপ করে লেখার চেষ্টা করি।কোন শব্দ উচ্চারণে কী বর্ণ ব্যবহার করতে হবে তার একটি গাইডলাইনও রয়েছে। উচ্চারণভিত্তিক ইংরেজি বর্ণে বাংলা টাইপিং 'গুগল ট্রান্সলেট'র  একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ। কিন্তু এখানেও কিছু গণ্ডগোল থেকে যায়। 'গুগল ট্রান্সলেট' ব্যবহার করে  ইংরেজি বর্ণে লেখা শব্দ টাইপ করলে যে বাংলা শব্দটি পাওয়া যা তা সর্বক্ষেত্রেই সঠিক বানান হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ ভুল উচ্চারণে শব্দ টাইপ করলেই বিপত্তি ঘটে যায়। আর সঠিক উচ্চারণ করে ইংরেজি  বর্ণে বাংলা লেখাও অতটা সহজ নয়। এই ক্ষেত্রে  পছন্দমত শব্দ না আসলে backspace চেপে পছন্দমত শব্দটি  সিলেক্ট করা যায়।এই সিলেকশনে ভুল হলে বানানটি চূড়ান্ত পর্যায়ে ভুলই থেকে যায়।


ইংরেজিতে একটি শব্দের একটিই বানান হয় যা পৃথিবীর  সব প্রান্ত থেকে ওই নির্দিষ্ট বানান অনুসরণ করা হয়।এই ক্ষেত্রে কোন দ্বৈতভাব নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমেরিকা তার নিজস্ব স্টাইলে কিছু ইংরেজি বানান লেখে যা ব্রিটেনের বানানের সঙ্গে মেলে না। সেই ব্যতিক্রমটা অবশ্যই বাংলা বানানের মতো এত জটিল নয় এবং সেই ক্ষেত্রে বানান ভুল হয়েছে বলা যাবেনা । দুইটি স্টাইলের যে কোনো একটি অনুসরণ করলেই হয়ে যায়।


কম্পিউটারে ইংরেজিতে টেক্সট লিখলে শব্দের বানান ভুল হলে সেই শব্দটির নিচে লাল দাগ পড়ে এবং যিনি টাইপ করেন তিনি সহজেই বুঝতে পারেন বানানটি ভুল হচ্ছে। পরে ভুল বানানটি সহজেই ঠিক করে নেয়া যায়।কিন্তু  'গুগল ট্রান্সলেট'  ব্যবহার করে বাংলা টাইপিং এর ক্ষেত্রে তেমন কিছু টেকনিক্যাল ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। এই বিষয়টি মাথায় রেখে নতুন সফটওয়্যার তৈরি করতে পারলে হয়তো বাংলা বানানের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ শুদ্ধতা অর্জনের একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ সৃষ্টি হবে।তবে এই জাতীয় কিছু করার পূর্বে বাংলায় নির্দিষ্ট ভাবে প্রতিটি শব্দের নিখুঁত বানান থাকা অতি আবশ্যক।


ইংরেজিতে একটি শব্দের বানান ভুল হলে ওই শব্দটি মুলত মরে যায় । এর কোনো সঠিক অর্থ বহন করেনা।যার জন্যে ভুল শব্দটি অনলাইনে কোথাও খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলায় একটি শব্দের বানান বিভ্রাট দেখা দিলে অনলাইনে ওই শব্দটির  শুদ্ধ বানান খুঁজতে গেলে বিড়ম্বনা আরো বেড়ে যায়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। একটি শব্দের বানান নিয়ে বিভ্রাট দেখা দিলে আমি যা করার চেষ্টা করি তা হলো গুগল সার্চ দেই।এই যেমন ধরুন 'বানিজ্য' এবং 'বাণিজ্য' কোনটি সঠিক বানান তা জানার  জন্যে গুগল সার্চ দিলাম । 'বানিজ্য'  শব্দটির জন্যে .৩৩ সেকেন্ড এ ৪৬৭,০০০ টি সার্চ রেজাল্ট পাওয়া গেল। আর  'বাণিজ্য' এর জন্যে .৩৪ সেকন্ডে পাওয়া গেল ১,৩৮০,০০০ টি সার্চ রেজাল্ট। এই ক্ষেত্রে দুটো বানান সঠিক হওয়ার কোনো কারণ নেই। ধরে নিলাম যেটি বেশি রেজাল্ট দেখালো হয়ত সেই বানানটি সঠিক। কিন্তু কখনো কখনো এর উল্টোটাও পেয়েছি অর্থাৎ ভুল বানানটির সার্চ রেজাল্ট বেশি দেখায়। যাক এই উদাহরণটি শুদ্ধ বানান খুঁজে বের করার কোনো সঠিক মানদণ্ড হতে পারেনা। তবে এই পরিসংখ্যান দিয়ে যেই বিষয়টা বুঝাতে চেষ্টা করছি তা হলো বাংলায় ভুল বানানের ভয়াবহতা! এই ক্ষেত্রে  অনলাইন বাংলা অভিধান থেকে শব্দটির শুদ্ধতা জেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা ।    


বাংলা ভাষায় বানান সমস্যা কোনো নতুন সৃষ্ট সমস্যা নয়। এই জটিলতা প্রাচীন ও মধ্যযুগেও ছিল এখনো আছে। এপার-ওপারে গবেষণাও হচ্ছে বিস্তর। হালে প্রযুক্তির অগ্রগতি হলেও ইংরেজি ভাষার মত বাংলা বানানে বিশুদ্ধতা রক্ষা করার প্রচেষ্টা এখনো সফল হয়নি। প্রযুক্তির নব আবিষ্কারে অচিরেই হয়ত সেই সমস্যারও চমকপ্রদ সমাধান আমরা দেখতে পাব। তবে আমার মনে হয় বাংলা ভাষার বানানের জটিলতাই এই ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।


বানান শুদ্ধ করে লেখার পুরো বিষয়টাই ব্যক্তিগত শিক্ষা ও আগ্রহের ব্যাপার। অসাবধানতা ও অমনোযোগিতা পরিহার করতে পারলেই এই ক্ষেত্রে অনেকটা সাফল্য আসবে।
সমাপ্ত