দিন ফুরায়ে যায়, বেড়ে যায় বেলা-
ভবনদী তীরে একা বসে নাইয়া
কাঁদছে তুফান ডরে
ভাসিয়ে জীবন-ভেলা।
ভেবে ভেবে দিনমান
দুঃখী নাইয়া ধরে গান-
"ওহে দয়াল বন্ধু প্রাণধন
কবে লইবা উজান।"
ক্রমশ নিভে যায় দিবালোক, থামে কোলাহল,
পাখিরা ফেরে নিকুঞ্জ-পথে,
দূরে বেঁজে ওঠে শঙ্ক-
নেমে আসে আঁধার ঘনঘোর।
গহীন তমসায় দিগভ্রান্ত নাইয়া
ফের গান ধরে-
" আহারে নিদারুণ বিধিরে
আমায় লাগাও কিনারে-"
ভেলা ভেসে চলে দিক-দিশাহীন
শ্রান্ত নাইয়া ক্রমঃশ বলহীন-
এলোপাথারি বৈঠা বেয়ে
নিঃশ্বাসে আর্তনাদ, সুঠাম বাহুজোড়া
সহসা হল ক্ষীণ।
নিথর-নিস্তব্ধ নিশি , নিকটে ভোর
গোঁটা ব্রহ্মান্ড জুড়ে কেউ কি নয় মোর?
এই ভাবতে ভাবতে অনাহারী ঘুমে ডুবে যায় শরীর,
শান্ত হয় ঢেউ-
নামে প্রভাতের প্রথম সূর্য্যালোক, রক্তাভ দিনমনি;
মাঝ নদীতে পড়ে রয় জীর্ণ ভেলা-
এ কোন পাপ-শাপের দন্ড নয়
সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার অবহেলা,
কি নির্মম, কি অদ্ভুত অবলীলা !
পাটাতনে পড়ে থাকে একজন দূঃখী নাইয়ার দেহ-
শুধু সূর্য্য দেখেছে তারে
দেখেনি আর কেহ।