যখন আমার পাপড়ি খোলা বসন্ত সময়,
স্বপ্নগুলো সবেমাত্র আড়মোড়া ভেঙ্গেছে,
নিদ্রার রেশ তখনো ছিলো যে চোখে,
শঙ্কিত হয়ে কম্পিত বুকে-
জেগে উঠেছি আমি।
ধুমকেতু হয়ে দিয়েছিলে দেখা, সাথে তুমুল ঝড়,
চোখের পলকে গুড়িয়ে দিলে আমার স্বপ্ন ঘর।
পরের সে' ইতিহাস; পরিহাস আর পরিহাস।
আছে তো সবারই জানা।
আমি হলাম ঠিকানাবিহীন শরত মেঘের ডানা।
অথচ সেদিন তুমি-
হতে যদি বসন্ত সমীরণ,
উন্মুক্ত আকাশ 'পর-
হতো না আমার এমন যাপিত জীবন।
কঠিন মৃত্তিকা 'পরে লাঙ্গলের ফলা
পারি না টানতে আমি আর তো।
জীবন আমার অন্য রকম
হলেও তো হতে পারতো!


গিনিপিগ আমি ছিলাম না তো,
আমি তো ছিলাম নারী।
তা'হলে এমন করলে কেন? জবাব কে দেবে তারি!
পৌরুষ প্রকাশে ব্যর্থ হলে,
ছলে বলে কৌশলে পালিয়ে বেরালে।
পরাজিত সৈনিকের মত আত্মগোপনে গেলে।
গুহার আঁধার থেকে আলোয় আসার সাহস হারালে।
আমার শেষ আশ্রয়, ছোট কুঁড়ে ঘর
যা তুমি ভেঙ্গেছিলে,
তা বিনির্মানের দায় এড়ালে।
তুমি তা স্বীকার করো বা না করো,
এ তোমার চরম হার তো?
ভুলগুলো যদি শোধরে নিতে,
জীবন আমার অন্য রকম
হলেও তো হতে পারতো!


খোলস থেকে বেরিয়ে এসে একবার যদি বলতে-
'ভুল হয়ে গেছে'; হাতে হাত রেখে তোমার সাথে চলতে।
একবার যদি সামনে দাঁড়াতে, দু'হাত বাড়াতে এসে,
একবার যদি বক্ষে জড়িয়ে নিতে;
মাথার উপর রাখতে যদি সহানুভূতির হাত।
অনুশোচনার দহনে যদি একটু কাটাতে রাত।
অনুভূতিগুলো প্রখর করে, প্রেমের অনলে দগ্ধ হতে,
প্রায়শ্চিত্ত করবে বলে, কথার কথাও দিতে।
তাহলে তোমায় ক্ষমা করে আমি
দিতে পারতাম হয়তো।
জীবন তখন অন্য রকম
হলেও তো হতে পারতো!


যারা খুন হয়, তারা মরে একবার।
আমি মরেছি বার বার, প্রতিদিন।
সোজা কথা নয় সিকি শতাব্দী, জমেছে কতটা ঋণ!
আমাকে ভেবেছ মৃত!
তাইতো-
স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে বেরিয়ে এলে,
বীরদর্পে এগিয়ে গেলে - সভা-সমিতিতে,
জনসমক্ষে, কবিতায়, সংগীতে।
আমি বিমূঢ়, বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি।
আর মনে মনে ভাবি, তুমি মানুষ না-কি?
অনুতাপ নেই, অট্টহাসিতে পড়ছো কিভাবে ফেটে?
নির্লজ্জের মত বুক ফুলিয়ে রাজপথে যাও হেঁটে!
আমি তো মরিনি, তুমিই মরেছ।
মরে গিয়ে বাঁচার অভিনয় করেছ।
আমি দূর্বাঘাসের মত বেঁচে উঠেছি।
হয়তো ভোগ করেছি তীব্র দহন।
মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করেছি যখন
বোবাকান্নায় কাউকে কাছে পাইনি,
অথচ এমন জীবন আমি চাইনি।
দমকা হাওয়ার মত তুমি না এলে,
আমি আর কারো হতাম হয় তো।
জীবন তখন অন্য রকম
হলেও তো হতে পারতো!


জীবনের সন্ধ্যা বেলায়-
মৃত ঝিনুকের বুক থেকে কেউ যদি মুক্তো কুঁড়ায়,
স্বর্ণকারের দক্ষ হাতে সোনাতে মুড়ায়,
ধারণ করে যদি অনামিকায়,
মুক্তোর দোষ কি তা বলো তো?
পচাগলা ঝিনুক থেকে যে কুঁড়িয়ে আনে
সেই তো জহুরি, সে-ই যথার্থ লোক তো।
এমন না হয়ে আমার জীবন
অন্য রকমও হতে পারতো।