আমি এক ভীষণ সময়ের কথা বলছি    
আমি  এক দুঃস্বপ্নের কথা বলছি  
তুষার কালের দ্বাদশ সহস্র শতাব্দী পরের কথা বলছি  
সৃষ্টির আদি প্রাণের কথা বলছি ।  
মাটির গভীর হতে মাথাতুলে সদ্য জন্মানো দুটি পাতার কথা বলছি  
যখন এই গ্রহে জীবনের জন্য কোন রসদ ছিলনা
ছিলনা প্রানের জন্য নূন্যতম উপাদেও বাতাস – অক্সিজেন
তখনও সে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছিল শতাব্দী থেকে শতাব্দী জুড়ে  
বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন সে পার করছে অনন্ত সময়  
ভূপতিত হয়েছে বার বার,  পুনরায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে নিঃশব্দে
মাটি আঁকড়ে থেকেছে;  নিজের চেয়ে অন্যের বেশি প্রয়োজনে  
বিলিয়েছে চলমান প্রাণের জন্য অমৃত উপাদান –
যা আর কেউ দিতে পারেনি, বা দেয়নি এখনো  
খাবার দিয়েছে আশ্রয় দিয়েছে প্রতি নবাগতকে,
নিজেকে বারবার বিপন্ন করে সাক্ষী থেকেছে চলমান বিবর্তনের
প্রবাহমান ইতিহাসের প্রতিটি মুহুর্তে, অনন্ত দৃঢ়তায়
অসীমানন্দের ভাঁড়ার থেকে এনেছে বৃষ্টি – মাটিকে সরস করেছে
মাটিকে রক্ষা করেছে শিকড়ের নিবিড় বন্ধনে,
রক্ষা করছে দীপ্ত দহনের করাল গ্রাস হতে, সম্পদ গড়েছে নিজের অস্থিতে
তবে কি একমাত্র সেই জানত আগামীতে আসবে মানব !
যার প্রধান হিতকারীর ভুমিকায় থাকবে সে অনন্তকাল জুড়ে !


আমি এক অব্যক্ত বেদনার কথা বলছি
আমি সেই নিবিড় সবুজের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলছি  
জানা নেই তার ভাষা, তার উপলব্ধি, তার ব্যথা, বেদনা, সুখানুভুতি
এটুকু জেনেছি ; জন্ম ইস্তক সে শুধুই বিলিয়ে চলেছে; বেড়ে উঠেছে
সহস্র অত্যাচার সত্ত্বেও প্রতিদিন সে নীরব নিষ্ঠ  দাতার ভুমিকায়    
প্রতি মুহুর্তে সাহায্যের করুণা ধারায় বিলিয়েছে নিজেকে, অথচ  
মানব তার বাসস্থান কেড়ে নিচ্ছে, তার বংশ বিস্তার আটকে দিচ্ছে
তাকে দীর্ন করছে প্রতিনিয়ত, তার অবলুপ্তির সমস্ত ব্যবস্থা করছে পাকা      
তবুও সে নির্বিকার ! নাকি শিহরনে  দিন গুনছে তার ভালোবাসার;
প্রিয় বন্ধুর অনাগত আগামীর ভয়ঙ্কর দুর্দশার কথা ভেবে।


আমি নিরুত্তর অরণ্যরাজির কথা বলছি,
আমি এক ক্লান্তিহীন সেবকের কথা বলছি,
হয়ত সে বলছে, হে মানব ; হে বন্ধু;  সংযত হও,
একটু বোঝ, বোঝার চেষ্টা কর এমন হৃদয় হীন হয়োনা
তোমাদের একটু ভালোবাসাকে সহস্র গুনে ফিরিয়ে দেব অযুত সময় ধরে,
তোমার জন্ম জন্মান্তরে,  আগামীর ঘরে ঘরে  
প্রতি শ্বাসে দেব অমিত প্রাণশক্তি, অন্ন; বস্ত্র; বাসস্থান;
প্রয়োজনীয় আরো অনেক অনেক, সময়ের প্রয়োজনে;  ব্যাপ্ততায়  
আমার দহনে যে তোমরাও দাহিত হবে প্রতি পলে, প্রতি আগামীতে
তুমি যেখানেই থাক আমাকে সঙ্গে রেখ, তোমাকে যে বড় ভালোবাসি বন্ধু
হে মানব তোমার অনেক আগে এসেও আজো তোমার জন্য আছি
তোমাদের জন্যই আমার বেড়ে ওঠা, ফলে ফুলে সজ্জিত হওয়া
বন্ধু,  তবুও যদি না মানো, তবে তৈরি থেকো অস্তিত্ব সংকটের
তীব্র দহনে তোমার সব লোভ পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে যাবে  
অনাবৃষ্টিতে তোমার মজুত জীবন শুকিয়ে, পায়ের তলার মাটি সরে যাবে
খাবারের এক কণাও পাবেনা এই চরাচরে, একে একে সব হারাবে
মুছে যাবে তোমার সকল ইতিহাস, কালের গর্ভে বিলীন হবে সকল সৃষ্টি
শুভ চেতনার আর্শিতে একবার দেখে নাও নিজের অবয়ব, ভেবে দেখ
তোমার প্রকৃত প্রয়োজনের পরিমাপ, নাকি হারিয়েছ অহং অনলে দৃষ্টি।
বন্ধু,  ফিরিয়ে এনোনা সেই দুঃসময়, লোভের থাবাতে শিকল পরাও
বাঁচার উপযুক্ত করে রেখো আগামীর বাসভূমি,  তোমার এবং উত্তরপুরুষের জন্য  
এ ধরায়, তুমিই পারো ভালোবেসে এগিয়ে যেতে, নব উত্তরণের পথে
আরো অনেক, অনেক সময় ধরে, সহবস্থানের সমঝোতায়, গৌরবের বিজয় রথে।


সোনারপুর
১০.০৬.২০১৯