সকাল থেকে দুপুর অনেক ব্যস্ততা থাকলেও  হরি ও কমলা আজ খুব খুশী
দুই ছেলে উঠোনে, পুকুর পাড়ে খেলছে, ওদের মনেও আজ আনন্দের বাঁশি
বিকেলের আলো শেষ হতে না হতেই, পুবের আকাশে আজ থালার মত চাঁদ
ছেলেরা বলে মা মা দেখবে এসো, কমলা উঠোনে দাঁড়িয়ে মেটায় চোখের সাধ
হরিকেও ডাক দেয়, বলে দেখবে এস কি সুন্দর, কমলার বিস্ফারিত চোখে বিস্ময়
হরিকে বলে, পূর্নিমার চাঁদ তো আগেও দেখেছি, জানতুম না এতো সুন্দর হয়
সন্ধ্যে নেমেছে, ঘরে আলো জ্বালাতে হবে, ভুলেই গিয়েছে অপরূপ রজত আভায়
সম্বিত ফিরতেই, ঘরে এসে দেশলাই ঠুকে টেমি, লন্ঠন ধরায়, সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালায়  
ছেলেদের হেঁকে বলে; এই তোরা বাবাকে নিয়ে ঘরে আয়, সন্ধ্যেবেলা আর বাইরে নয়
কমলার ডাকে ছেলেদের নিয়ে হরি চলে আসে, আগড়ের দরজা কষে বাঁধে দাওয়ায়
দুই বন্ধু নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে পুবের দাওয়ায়, কমলা বলে ঠাকুরপোদের ডাক দাও
হরি এগিয়ে গিয়ে নাড়া দিয়ে বলে, এই গৌর ওঠ ওঠ, দেখতিচি আজ রাত দিবি ফাও    
উঁ-আ- আড়-মোড়া ভেঙে গৌর উঠে বসে, বলে ইশ...আগে তো ডাকবি, সন্ধ্যে হয়ে গেল    
গৌর নাড়া দেয় নিতাই কে, নিতাই পাশ ফিরে শোয়, ঘুম ঘোরে ... হরি বল, হরি বল ।


কমলা রাতের রান্না চাপিয়েছে, কাঠের উনুনের গনগনে আভায় কমলাকে অন্য রকম লাগে  
দুই ছেলে মায়ের দুপাশে, হরির মনে পড়ে না এমন দেখেছে কবে, চুপ করে তাকিয়ে থাকে  
জ্যোৎস্না ধোয়া নিস্তব্ধ দ্বীপ ভূমির সন্ধ্যায় ভাত ফোটার গন্ধে, হরি স্মৃতিতে হারিয়ে যায়  
হাঁড়ির সরা খোলার শব্দে হরির সম্বিত ফেরে, ছেলেদের ডাকে; রতন, মানিক একেনে আয়  
গল্প শুনবিনে ! গৌর কাকা গল্প বলবে, শীগগির আয়, ছেলেরা এসে বসে হরির দুপাশে
নিতাই ঘুম ভেঙে, মাটিলেপা হ্যাঁতাল বেড়ার চিলতে খোপে চোখ রেখে ভাসে চাপা শ্বাসে
বলে তোরা দেকেচিস বাইরেটা ! এমন দেখিনি আগে, যেন রাস লীলার নৌকো ভাসে
গৌর বলে তুই কি ঘোরে আছিস ! ওরে এটা ফাগুনি পূর্ণিমা, রাস হয় কার্ত্তিক মাসে
হুঁ, সে আমিও জানি;  তোর চোখ নেই, দুই বন্ধুর খুচরো কথায় হরি হাসে মজায়  
রতন;  মানিক ঘুমে ঢুলে পড়েছে বাবার কোলে, ভাত বেড়েচি কমলা এসে জানায়।


খেতে বসে,  গৌর বলে একটা জাল থাকলে ... খালে দু-খেপ মেরে মাছ ধরা যেত  
হরি বলে;  মন্দ বলিসনি কথাটা, জাল থাকলি কি আর এই ডাল ভাত খেতি হত
নিতাই বলে, চল কাল সকালে ঝোড়োর কাছে যাবো, খুঁজে পেতে আনবো জাল
হটাত গৌরের মনে পড়ে যায় গুনো হালদারের কথা, শিউরে ওঠে, মন টালমাটাল
খালে নাইতে নেমে কুমীরের কামড়! মাছ ধরতে গেলে না জানি কি আছে কপালে  
আপন মনে মাথা নাড়ে; ভাবে ডাল ভাতই ভালো; মাছের লোভে সে যাবে না খালে  
কমলা লক্ষ্য করে, বলে ও ঠাকুরপো, কি হোল ! হটাত কোন কথা মনে এলো  
লজ্জা পেয়ে  বলে... না না ও কিছু না, এমনি, ভাবতিচি ডাল ভাত খুব ভালো ।  
  
সোনারপুর
২৩/১১/২০