তপ্ত বোশেখে জঙ্গল কাটা জমির মাটি ফুটি ফাটা, দুএকটা ঘাসের মাথা ক্ষীণ  
দুপুরের দিকে দূরে তাকানো দায়, রোদ্দুর নেচে বেড়ায় চৌদিকে, ছায়া হীন
কমলা ভোর বেলায় উঠে বেলা বাড়ার আগে বাইরের কাজ সারে, একা হাতে
রোদ যেন গিলে খেতে চায়, বাতাসে ঘুর্নি লাগে, ছায়া কেবল ঘরে দাওয়াতে
কোলাহল হীন অসীম নিস্তব্ধতায় কাটে দিন, মন কেমনের রুক্ষতায় চরাচর
হরি ভোরে উঠে চলে যায় কাজে, দুই ছেলে কে নিয়ে সারা দিন কমলার সংসার
দুপুরে খেয়ে খানিক ঘুমিয়ে, ছেলেদের নিয়ে বিকেলে পানি দেয় ক্ষেতে, চারায়
সন্ধ্যার আগে হরি ফেরে প্রতিদিন ক্লান্তির বোঝা নিয়ে, সুন্দর সকালের আশায়
কোন কোন দিন হরি সময় পেলে জাল মারে খালে, যা পায় দুই-তিন দিন যায়
নিরামিস তরকারিতে অরুচি, মাছ হলে ছেলে দুটো খুব খুশী, পেট ভরে ভাত খায়
গুনোর তিন ছেলে মাঝে মাঝে আসে, পাঁচ জনে খেলা করে উঠোনে মিলেমিশে
গুনোর বউও কমলার সঙ্গে গল্প করতে আসে, পরিচয় বেশ গভীর হয় শেষে।      


সকাল থেকেই আকাশ গুম মেরে আছে, উঠোন ঝাঁট দিতে দিতে কমলা দেখতে পায়
হরি ফিরে আসছে, মনটা কু-গেয়ে ওঠে, শরীর খারাপ ! ভাবে সকলেই জিরোন চায়
হরি উঠোনে এসে দাঁড়াতেই কমলা বোঝার চেষ্টা করে, জিজ্ঞাস করে ফিরে এলে যে
শরীর খারাপ ! হরি দাওয়ায় এসে বসে, জল খেয়ে বলে, না দক্ষিন রায়ের আক্রোশে
কমলা বুঝতে পারে না, চেয়ে থাকে; হরি বলে একজন বাহ্যে গেছল ভোর বেলায়
তারে টেনে নে গেছে, বাকিরা খোঁজা খুঁজি করতে খানিক তফাতে ঝোপের মধ্যে পায়
আদেখ সবাড় করা দেহ, তাই কাজ বন্ধ আজ, ঠিকেদারের লোক এলি তারপর হবে
দলের সর্দার কয়েছে, যে মরে গেচে তার পরিবার নাকি সায়েবের থেকে টাকা পাবে  
কমলা বলে হুঁ টাকা দে সব হবে, ঝাঁটা হাতে বাকি কাজ শেষ করতে এগিয়ে যায়
হরি গামছায় ঘাম মুছতে মুছতে গিয়ে মাদুর পাতে দাওয়ায়, মাদুরে শরীর এলায়।  


হাস-ফাস গরমে প্রান যায়, ঘরে থাকা দায়, কমলা দাওয়াতে মাদুরে বিছানা সাজায়
ছেলে দুটো আগেই ঘুমিয়েছে হরির পাতা মাদুরে, তাদের তুলে এনে কমলা শোয়ায়
বকবক করে সারাদিন টই টই, সন্ধ্যে হলেই ঘুম; বড় হচ্ছে এত টানাটানি কি সয়
হরিকে বলে, পাঠশালায় যা শিখেছ,  ছেলে দুটোকে তো তাও শেখালি ভালো হয়
কৃষ্ণ পক্ষের রাত,  তারার আলোয় অনেক দূর পর্যন্ত আবছা আবছা দ্যাখা যায়
নিস্তব্ধ নিঝুম চরাচর; নিজের কথাই কেবল কানে বাজে, শব্দহীন বিরাট শূন্যতায়  
কমলা আগড়ের দরজার ফাঁক দিয়ে হটাত আলোর দ্যাখা পায় দখিনে খালের কাছে
চোখ রগড়ে ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করে, এতগুলো আলো !  ভাবে আগে পিছে
হরিকে ডাকে শীগগির ওঠ, দেখো কারা আসছে, হরি ধড়মড়িয়ে উঠে এগিয়ে আসে
তাকিয়ে থাকে সার বেঁধে চলা পাঁচ ছটা আলোর দিকে, চলছে যেন বাতাসে ভেসে
কমলা ফিস ফিস করে বলে এ কিসের আলো ? বলতে বলতেই দপ করে নিভে গেল
হরি চিন্তিত,  কমলা কে বলে বিছানা গোটাও, একেনে ঘুম হবে না, ঘরে শোয়াই ভালো।  


সোনারপুর
২৩/১২/২০২০