পাশাপাশি বাস দেখাদেখি চাষ, বেড়ে চলে ধীরে ধীরে, বন্যপ্রান যায় সরে
জঙ্গল বিনে ওরাও উদবাস্তু, সুযোগে হানাদারি চালায় মহা আক্রোশ ভরে  
কখন কোথায় কি ভাবে কেউ জানে না, ধান ক্ষেতে না কি পুকুরের জলে
যারাই বসত করত এখানে, তারাই জানে, প্রতিদিন কতটা অসম যুদ্ধ চলে
মানুষ বা বন্যপ্রান সবাই চায় বাঁচতে একে অন্যকে সরিয়ে, নিজের মতো  
কোথায় কি ঘটছে, বিস্তির্ন বাদাবনের আনাচে কানাচে, কেউ জানত না ততো
সন্ধ্যার আগেই ঘর দাওয়ার দরজা বন্ধ, পুকুরে ঘাট ঘিরে পালার সুরক্ষা বলয়
দক্ষিনরায় এলে বোঝা যেত গন্ধে, টিন পিটিয়ে জানানো হত মানুষের আলয়
রাতে টিন পেটানোর শব্দে ঘুম ভাঙলে কারো, সেও বাজাতো একই ভাবে
ঘুমহীন রাত থমকে যেত হাড়হিম করা গর্জনে, মনেহত কখন সকাল হবে !


ফাগুনের শেষে দুটো দামড়া, একটা বকনা নিয়ে যতীন, নিতাই, গৌর আসে
নাওয়া খাওয়া সেরে, দীর্ঘ পথের ক্লান্তি ভুলে চার বন্ধুতেই আনন্দে ভাসে  
যেন অনেক দিন পর বাড়ীর মানুষরা ফিরেছে বাড়ি, দূরদেশ হতে কাজ শেষে
নতুন অতিথিরা খড় জল পেয়ে আরামে শুয়ে কাটছে জাবর, গাদার গা ঘেঁসে
হরির কপালে চিন্তার ভাঁজ, ভাবে রাখবে কোথায় এদের, গোয়াল হয়নি বাঁধা
এক আট চালাতেই রান্না, খাওয়া, ঘুমনো সব, কমলা কে বলে হল বেশ ধাঁধা
কমলা বলে ওদের ও জায়গা হবে একেনেই, উত্তরের দাওয়া তো আছে খালি
ঠাকুরপোদের নে কাজে লেগে পড়, খুব বড় তো নয়, বেড়ার গোল এক ফালি
তিন বন্ধু্র সাথেও কথা হয় হরির, বাঘের হামলার কথা শুনে সকলেই চুপ
যতীন শুধু বলে বৌঠান ঠিকই বলেছে, সব হয়ে যাবে, চিন্তে কর না খুব।


প্রথম দু-রাত ভালো ভাবে কাটলেও, বকনাটা ছটফট করে পরের ভোর রাতে
দামড়া দুটো ডেকে ওঠে,  আতঙ্কের গন্ধ নাকে আসে টিন পেটানো শব্দের সাথে
নিতাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়, উঠে বসে, হরিকে জাগায়, যতীন গৌর ও জাগে
হরি লন্ঠনটা উসকে দেয়, টিনের আওয়াজ করে, বাকিরা বেড়াতে চোখ রাখে
কিছু দেখা না গেলেও সবাই বুঝতে পারে, বাকি রাত জেগেই কাটায় চারজন
পর দিন সকালে নিধি খবর দেয়, সবাই সতর্ক থেকো, হামলা করচে মহাজন।


সোনারপুর
০১.০২.২০২১