বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে হালের বলদ পেয়েছে হরি, নাঙল জোয়াল এনেছে কিনে
কমলা কে বলে আরো বেশী জমিতে ধান লাগাবে, চাষা ছিলুম বটে... নাঙল বিনে
কমলা বলে, কাড়ান চাষ দে রাখলি তো পারো ; হরি বলে হুঁ, একটু বৃষ্টি হলি ভালো হত
ঝাঁঝিয়ে উঠে কমলা বলে ঐ আশায় থাকো, যেন সত্যপীর, সব হবে ওনার কথা মতো
হরি বলে আমি কি তাই বললুম ? তবে মনে হচ্ছে দু-চার দিনে একটা বাদলা হবে
হলি ভালো, আর না হলি কি কাড়ান দেবে না ? বীজতলা তৈরি করার সময় পাবে !
জঙ্গল উচ্ছেদ হওয়া জমিতে তেমন ঘাস নেই, একটু বেলায় রোদ নাচে, চোখ ঝলসে যায়  
বোশেখে একদিন বর্ষা হয়েছে, খালের ধারে একটু ঘাস, গরু গুলো শুধু শুকনো খড় খায়
সারাদিন গরমের দাপট, ছায়া বলতে ঐ চালের নিচে, ঘাম শুকালে গা কর কর করে নুনে
বসে জিরিয়ে সময় কাটে, জঙ্গল কাটা; বাঘ তাড়ানোর কাজ হচ্ছে বটে, সায় নেই মনে
এরমধ্যে একদিন রাতে বৃষ্টি নামে, হরি ভোর বেলায় হাল জোড়ে, চাষ দেয় বীজ তলায়
মনে মনে ভাবে কমলা কি এত বোঝে ? হরি মুখে কিছু বলে না, জানে কোনটা মানায়।  


বেলায় হাল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরু দুটো তেষ্টা মেটাতে খালে গিয়েও লাফিয়ে দৌড় লাগায়
হরি নাঙল রেখে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পায়, এক নক্ররাজ আধেক জলে আধেক ডাঙায়      
মনে পড়ে প্রতিবেশী গুনোর কথা, গরু দুটো এক দৌড়ে গোয়ালে নিরাপদ আশ্রয় নেয়
হরি ঘরে ফিরে ওদের পানি দেয়, গায়ে হাত বোলায়, হয়ত আশ্বস্ত করতে চায়
পরে নেয়ে এসে দুই ছেলেকে নিয়ে খেতে বসে, ঘরের পিছনে বাঁধা বকনা ডাক দেয়
দড়ি ছিঁড়ে উঠোনে এসে দাঁড়ায়, হরি ভাতের থালা ফেলে লাঠি হাতে দৌড়ে পিছনে যায়  
দেখতে পায় কেওড়া গাছের পাশ দিয়ে বেশ বড় শঙ্খমুখ নেমে যাচ্ছে খালে, ফিরে আসে
খেতে খেতে কমলা কে সব বলে, কমলা বলে সেকি ; এমন তো ঘটেনি এত মাসে
দুই ছেলেকে বলে এই তোরা দাওয়ায়, উঠোনে খেলবি, একদম যাবিনে খালের ধারে
হরিও বুঝে পায় না, হটাত কেন এমন হচ্ছে ? রাতে বাঘ দিনে কুমীর ! সঙ্কটে পড়ে।


বেলা গড়ালে আজ গুনো আসে বউ সঙ্গে করে, আগেও এসেছে হরির ঘর চাপার দিনে  
উঠোন থেকে ডাক দেয়, হরি... ও হরি ঘরে আছো নাকি, হরি বেরিয়ে আসে ডাক চিনে
গুনোর হাতে কাগচে জড়ানো বাঁট দেখে হরি বলে গুনো দা কাস্তে এ সময়ে কি হবে
গুনো হেসে বলে রসো ভায়া রসো, আগে বল দেখি মাছ ধরতে খালে গেছলে কবে
হরি বলে; হ্যাঁ তা হপ্তা দুই হয়ে গেল মনেহয়, সে এক বিপদ,  মুড়োয় বেঁধে ছিঁড়েছে
টেনে কি তোলা যায় ! বহু কষ্টে তুলিছি, তা হটাত একথা কেন ? কোন অসুবিধে আছে !
তিনটে ছাগল ছেলো, আসতে যেতে দুটোরে নেচে, পাঁচখানা হেঁসো এনিচি, পেট চিরবো এবার
হরি বুঝে উঠতে পারে না, কি যে বল দাদা! বুঝিনে কথা, কাদের পেট চিরবে গো, কার !


সোনারপুর
২৫/০২/২১