ডাল ভাত আলু চোখা আর শীতের তাজা কাঁকড়ার ঝালে দুপুরের খাবার শেষ  
বেলা অনেকটাই গড়িয়েছে, আড্ডা জমে উঠেছে, কথায় ভাসে শিহরণের রেশ    
ঝোড়োর ডাকে নিধি ঊঠে যায়, দাঁড় নামায় জলে, পৌঁছাতে হবে সন্ধ্যার আগে
হরি বলে মিতে আমি ও বসতে পারি,  দাঁড় টেনে দেকি,  কেমন লাগে।
পরদিন হরিরা চার বন্ধুতে বেরিয়ে পড়ে, আলাপ করে অন্য মানুষদের সাথে
কিছু সময় ঘুরে ফিরে, নতুন ঘরের দাওয়ায় বসে ঠিক হয় ফিরবে কোন পথে
যে পথে হরি প্রথম বার এসেছিল,  সে পথেই মঠ গাঁয়ে যতিনের পিসির ঘর
যতিনের ইচ্ছাতে বন্ধুরাও সায় দেয়, পিসির ঘর ঘুরে বাড়ি ফিরবে তারপর।


হরি বন্ধুদের নে মিঠে খালে জলের ধারে যেতেই জল উল্টিয়ে পালায় মাছ    
শাপলা পাতার ফাঁকে কাঁচা ঢ্যাঁপ, পাড়ের কাছাকাছি ভাসা ঘাসের চাক, জলজ গাছ  
গুনো গামছা কাঁধে ঘটি হাতে খালের দিকে আসে, হরি হেঁকে বলে দাদা নাইবে নাকি  
সাড়া দেয় গুনো; রোজের মত পা ঝুলিয়ে পাড়ে বসে, বলে তোর আর কত বাকী
হটাৎ ঝাঁপানোর শব্দ, তলিয়ে যায় গুনো, সামান্য পরে উলঙ্গ হয়ে উঠে আসে পাড়ে
হরিরা ছুটে যায়, দেখতে পায় বাঁ-পায়ে খুবলানো মাংস ঝুলছে, কামড় পড়েছে হাড়ে  
গুনোর ছেলেরা ও ছুটে আসে, হরি ঝুলে থাকা মাংস টেনে বসিয়ে চেপে ধরে পা  
নিতাই খানিক কচি দুব্বো ছিঁড়ে;  চিবিয়ে ভেজা গামছায় কষে বেঁধে দেয় ঘা
যতিন; গৌর দুজনে একসঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠে,  ঐ দ্যাখ শালা ভাসতেছে, মাঝারি কুমির
গৌর ও নিতাইয়ের কাঁধে ভর রেখে গুনো ঘরে যায়, দুশ্চিন্তায় মুখ শুকোয় হরির  
বন্ধুরা ঘরের দাওয়ায় এসে বসে, যতিন বলে না না হরি, ঘাট বাঁধা যাবে না খালে
তোরা কেউ খালে যাবিনে, মোন কেটে জল ঢুকিয়ে সব সারতি হবে পুকুরের জলে
নিতাই; গৌর সায় দেয়, বলে কাল সকালেই কাটব, জল ঢোকাবো তবে যাবো ঘরে
ভাবনা মত সকালে চার বন্ধু লেগে পড়ে কাজে, হু হু করে জল ঢুকিয়ে পুকুর ভরে।


হরির নতুন ঘরের সব কাজ প্রায় সারা, আরো দুটো দিন বেশ আনন্দেই কাটে সবার
নিধি গুনোর ঘটনা শুনে বলে, হ্যাঁ ঐ নোনা খাল বেয়ে আসে, শুনিচি দু-এক  বার  
খালে না গেলি ভয় নেই, তবে নজর রাখতি হবে, হপ্তা দুই পরেই তো সবাই আসবে
হরি বলে মিতে ঝোড়োর নৌকো যদি পাওয়া যায়,  বউ ছেলেরা কি হাঁটতে পারবে
হ্যাঁ মিতে বলা আছে, চিন্তে করো না, তুমি খালি দিনটা ঠিক বল, সব হয়ে যাবে
আর তোমার সঙ্গে পরিবার, সংসারের জিনিষ পত্তর থাকবে, তাই ভাবতিচি কি করবে !


সোনারপুর
১৭/৯/২০