বাড়ি ফিরে হরি; গোচ-গাছ শুরু করে, হাতে সময় নেই বেশী
বুকে চেপে অনন্ত নোনা পানি, জন্ম ভিটের সুখ দুঃখ রাশি রাশি
গাঁয়ের অনেকে জেনেছে সব বন্ধুদের গল্পে, কেউ খুশী কেউ বা নয়  
কেউ বলে আহা দুঃখ যদি ঘোচে; কেউ টিপ্পুনি কাটে - গল্পে সব হয়
আগের কথা মত জ্ঞাতি বড় দাদাকে হরি লিখে দেয় নিজ ভাগের সব সত্ত্ব  
লুকোতে পারে না দীর্ঘশ্বাস; ছল ছল চোখ; মনে মনে বলে আমিতো নিমিত্ত
প্রতিদিন খবর নেয় বন্ধুরা, হরির সঙ্গে কে কে যাবে পৌঁছাতে ঠিক হয়
হরি বলে তোরা ব্যস্ত হোসনি,  আমরা ঠিক চলে যাবো, অচেনা পথ নয়
গৌর আর নিতাই বলে তুই কেন ভাবতিছিস; একাই তো থাকবি এরপর
আমাদের কথা কি তোর থাকবে মনে ! দূরে থাকলি সব্বাই হয় পর
যতীন বলে;  হরি তোর মিতে টা বড্ড ভালো, তুই থাকবি বেশ মজায়
আমদের কথা ভাব, দল ভেঙে গেল,  কারে বসাবো তোর জায়গায়।


সময় এগিয়ে আসে, এই বছর মাঘী পূর্নিমা পড়েছে ফাগুনের প্রথম হপ্তায়  
এই গ্রামের সকল শুভ কাজের আগে পরে জড়িয়ে থাকে দেবী নারায়ণী, পুজো পায়
নারায়নী মন্দিরে উৎসব; হরির বউ পুজো দেবে, মানত করেছিল মায়ের দরজায়  
অনেক কথা সয়ে নতুন দিনের আশায় বুক বেঁধে, শ্রীচরণে অর্ঘ সাজায় কৃতজ্ঞতায়    
হরি;  লালপাড় শাড়ি পাঁচ রকম ফল এনে দেয় বউয়ের মনস্কামনা পুরনের মানত মত  
সাত পুরুষের ভিটে ছেড়ে চলে যাবে হরি; জানে না ভুলতে পারবে কি স্মৃতি আছে যত
যকের পুকুর; বাঁধানো ঘাটে মায়ের শাঁখা পরার গল্প, আজন্ম লালন করেছে মনে মনে
দখিনে তার সুবিশাল প্রাচীন বটের ছায়ায়; কত পুরুষের ক্লান্তি ঘুচেছিল কে জানে
হিরু মাস্টারের পাঠশালা; পাশে তার প্রাচীন অশ্বত্থের শাখা ঢেকেছে মাধবী লতা
স্মৃতির পাতা জুড়ে শুধুই অবিন্যস্ত হাহাকার;  জানবে না কেউ কোনদিন সে কথা  
গৃহস্থালির নানা জিনিষের সাথে টুকরো কাপড়ে যত্নে বেঁধে নেয় সাত পুরুষের মাটি
নতুন ভিটেয় নতুন ঘরে ছড়াবে সে পূর্ব পুরুষের আশীর্বাদ, যা সোনার চেয়েও খাঁটি।


ফাগুনের বাইশ তারিখ বুধবারের ভোর,  আব্দুল মিয়াঁ হাঁক দেয় হরি ভাই... হরি...  
গৌর ও নিতাই হরির বাড়িতেই ছিল, আব্দুলের ডাকে বস্তা নিয়ে চলে ধরি
দুই ছেলের হাত ধরে কমলা মায়ের মন্দিরে প্রণাম জানায়, হরি এসে দাঁড়ায় পথে
হরির দুচোখ ভার হয়ে আসে, বউ ছেলেকে উঠিয়ে,  নিজে উঠে বসে বন্ধুদের সাথে  
আব্দুল গাড়ি ছাড়ে, এগিয়ে চলে গন্তব্যের দিকে, কারো মুখে কথা নেই সব বোবা
দুই ছেলে কমলার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে, চোখ টানছে সবাইয়ের; সারারাত জাগা
একে একে পার হয়ে যায় চেনা জনপদ, মাঠ ঘাট পার হয়ে পৌঁছায় রেলের ইস্টিসানে
মালপত্র নামায় দুই বন্ধু, বউ ছেলেকে নিয়ে হরি নামে, আব্দুল বলে বড্ড লাগতেছে মনে।


সোনারপুর  
১২/১০/২০২০