দুই ছেলে অবাক চোখে দেখে চারদিক, কখনো আসেনি তারা গ্রাম ছেড়ে দূরে
রেলের লাইনের পাথর হাতে তুলে দেখে, লোহার বেড়া , এটা সেটা দ্যাখে ঘুরে
ছোট্ট মনে অনেক প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যায়, দৌড়ে এসে মাকে শুধোয়, মা’ও জানে না
বাবা আছে পাশেই বসে, তবুও তারা আজ সাহস পায় না, বাবা আজ কেমন অচেনা
ঢং ঢং ঘণ্টা বাজে, হরি বলে গাড়ির সময় হল, বউ কে বলে ওদের হাত ছেড় না
কমলা ও অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে, রেলগাড়ি দেখতে কেমন তারও অজানা
গল্পে শোনা দৈত্যের মত মাটি কাঁপিয়ে ছুটে আসে অদ্ভুত শব্দে, ভয়ে প্রাণ দুরুদুরু
সিঁড়ি বেয়ে উঠে কাঠের বেঞ্চিতে বসে মুখে ভয়ের ছাপ, একটু পরেই যাত্রা শুরু
জানালায় চোখ দুই ছেলের, দেখে মাঠঘাট গাছ ছুটে চলে যায়, কেউ দিয়েছে তাড়া
কিছু উড়ে পড়ে চোখে, হাতের উল্টো পিঠে চোখ কচলাতে থাকে, বিস্ময় চোখ ভরা
কমলা কাছে ডাকে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বলে একেনে বস, আবার পড়বে ধুলো
বায়না ধরে সে জানলাতেই যাবে, হরি তাকিয়ে বলে কথা শোন, বায়না নয় ভালো।


মাতলায়  সকলে খায় কালোর হটেলে, বস্তা কাঁধে তিন জনে চলে নৌকা ঘাটে
দূরে হাত দেখায় ঝড়োর ছেলে , নিতাই বলে ঐ যে আছে ওরা, নৌকায় গিয়ে ওঠে
মিতে কই ! হরি শুধায়;  তেনার বড্ড কাজ পড়েছে, নৌকা ছেড়ে যায় ভাটির টানে  
ছইএর ভিতরে কমলা দুই ছেলে কে নিয়ে , এরা তিন বন্ধু বাইরে বসে সময় গোনে
নৌকা লাগে বলাইয়ের বাড়ীর পিছনে নদীর চড়ে, দিন বেড়েছে বেলা যায়নি পাটে
হরি নামে আগে, নোঙর লাগায়, ঝোড়োর ছেলে হালের মোড়ায় নৌকো ভেড়ায় ঘাটে
কমলা এগিয়ে আসে দুই ছেলের হাত ধরে, হরি কোলে করে ছেলেদের নামায়  
পরে কমলার হাত ধরে শক্ত করে, বলে সাবধানে পা রাখো, পিছলে যেওনা কাদায়  
একে একে নামায় বস্তায় বাঁধা জিনিষ ছিল যত, গৌর ও নিতাই নামে সব শেষে
বলাই এসে দাঁড়ায় নদী বাঁধে, দুই ভাগ্নের হাত ধরে, ধীর পায়ে কমলা দাঁড়ায় এসে
বস্তা কাঁধে তিন বন্ধু উঠে আসে নদী বাঁধে, এগিয়ে চলে সবাই বলাইয়ের পিছু পিছু
হরির ছেলেরা এই প্রথম এলো মামার ঘর, অচেনা জড়তায় চুপ, শিশু মুখ কাঁচুমাচু ।  


সোনারপুর  
২১/১০/২০২০