তিন দিন হয়ে গেল মিতের দেখা নেই, নিধির মনটা আজ বেশ উতলা
বরাবরের নিষ্ঠায় রোজের কাজ করে; তবুও মনটা কেমন নির্জলা
নিধি ভাবে; মিঠেখাল ঘুরে যাবে কাল, মাঝিকে খবর দেবার পথে
সকালে বাবুর কাজ সেরে বেরিয়ে পড়ে, দেখে জঙ্গল সাফ; দূর থেকে
খান কতক বড় গাছ ছাড়া আর কিচ্ছু নেই ! মনে মনে তারিফ করে
ভাবে একটা মানুষ এ ভাবে... এত তাড়াতাড়ি কাজ করতে পারে
জমির সীমানায় গিয়ে হাঁক দেয় নিধি, মিতে... ও মিতে, হরি ঘুরে দেখে
হাত দেখিয়ে ইশারায় বলে আসছি, তবুও নিধি এগিয়ে যায় হাসি মুখে
অবাক হয়ে নিধি বলে; এত গাছ কাটলে কখন ! তুমি দেখি বিশ্বকম্মা
হরি হেসে বলে, মিতে তুমি কী ভাবছ জানিনে, তবুও গেরামে বলে অকম্মা
এখন ঐ ছেঁটে ছুঁটে আলাদা করচি, কোড়া; আড়া; খুঁটি লাগবে তো ঘরে
আজ শেষ করে যাব; কাল যাব উলু কাটতে, একপো বেলার পরে।
হরি বলে, মিতে তুমি কোথায় চললে ! ঐ... তিন নম্বরে – মাঝির কাচে
বোট নে-যেতে হবে মাতলায়, ছোট দাদাবাবু আসবে, সামনের মাসের মাঝে
ও... তা তুমিও যাবে মিতে ? হুঁ – বাবুর হুকুম হলি যাব, আর যাবে সরকার
বজরা; বোট দুটোই যাবে বজরায় দাদাবাবু, বোটে মাল পওর যা যা দরকার
মিতে তুমি কাজ কর আমি যাই, কাল সকালে উলু পাড়ে দেখা হবে
হরি বলে, তিন নম্বরের ওদিকটায় তো ঘন জঙ্গল, মিতে কোন দিক দে যাবে
এই সোজা গে গাং ভেড়ি ধরব, মাঝিরে খবর দে সঙ্গে সঙ্গে ফিরব
ও কাছারি এসে শুনে যাবে সব, মনিবের হুকুম ভাই, যা বলে তাই করব
নিধি চলে যায়, হরি খানিক তাকিয়ে থাকে, থেকে থেকে চিলের ডাক ভাসে
কাজে লেগে পড়ে, ভাবে জঙ্গল সাফ হয়ে ভরে যাবে মানুষের বসবাসে
হরি খালের কিনারে কাটা গাছ গুলো ছেঁটেছুঁটে চৌহদ্দির ভিতরে রাখে এনে
ভাগে ভাগে কোড়া, আড়া, খুঁটি আর বেড়ার ছিটে, শুকিয়ে যাবে কয়েক দিনে
কাজ শেষে খালের কাকচক্ষু জলে হাত মুখ ধুতে ধুতে, দেখে মাছে জলে খাল
মনে মনে ভাবে বসত করি আগে, মাছ ভাত হলেই হবে, দরকার একটা জাল।
সোনারপুর
০৭/০৭/২০২০