এম্বুলেন্সটি শেষতক এসে দাঁড়ালো আমার রেসিডেন্সের দরজায়,
খুব বাহারি নাম "সরকার রেসিডেন্স"
বাড়ির মালিক আমেরিকা প্রবাসী,
আমার ডাকনামে নাম, তপন,
তাই এ সখ্যতা!এ বসবাস,এক যুগ ধরে !
-
বুকহীম করা ঘন্টা ধ্বনি থেমে গেল
শীতল স্নায়ুযুদ্ধের চেতনায়,
আমার চিকিৎসক কন্যা শ্রেষ্ঠা আর সহধর্মিণী ছবিছন্দা
দুহাত ধরে তুলে দাঁড় করালো আমাকে বিশেষ কায়দায়।
আমার অচৈতন্য অনুভবের দরজায় বিচিত্র শব্দ তরঙ্গ,
সঙ্গে ছুটে এলো এম্বুলেন্স স্বেচ্ছাসেবীর চৌকস কর্মী,  নীলক্রস আঁটা সফেদ পোশাক সঙ্গে হেলমেট, যেন মহাশূন্যে পরিভ্রমণ শেষ করেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন একজন সংখ্যালঘু কবির  দায়িত্ব, ঈশ্বরের নির্দেশ তাকে বাঁচাতে হবে, বাঁচাতেই হবে।
-
আরো কিছুদিন অনুমোদন পাওয়া গেছে --
সমাজের কাছে কিছু ঋণ আছে তার,
পরিশোধের সুযোগ পাওয়া গেছে ।
-
এই বিশেষ ধারা ও তফসিলে আজো সমাজকে ভুক্রটি
দেখাচ্ছেন প্রাণ প্রিয় সুহৃদ ড.তসিকুল ইসলাম রাজা,
অগ্রজ বন্ধু হাসান মীর, প্রার্থনা করি তাঁরা শতায়ু হউন,
সম্পূর্ণ করতে হবে তাদের বরাদ্দ সময়।
-
[চিরকাল একজন চিত্রশিল্পী, একজন গায়ক, একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন চলচ্চিত্র কর্মী,একজন অধ্যাপক, এমন কি একজন রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমিকনেতা, সোশাল একটিভিস্ট, সংখ্যা লঘু থেকে যায় জীবনভর।সমাজে আজও তাদের ঠাঁই নেই। বাড়ি ওয়ালা শুধোয় 'পারবেন তো? না তিনমাসে গনেশ উলটাবে ?]
-
পরম যত্নে শুয়ালো এম্বুলেন্সের মোটা গদি আঁটা তেভাঁজ বিছানায়
তার পাশে চেয়ারে বসলো আত্মীয় স্বজন,বেশি ঘনিষ্ঠ জনেরা,সঙ্গে পুত্র শ্রীমান অমিতবিক্রম ,
অন্যান্যরা সামনে।
দীপ্তর হাতে স্টেয়ারিং,নির্দেশ পেতে খুব ধীরে
দুলে উঠলো গাড়ী, সাপের মতো হিসহিসিয়ে,
আবহাওয়াটাও যেন সাপ শীতল হিমঘর
আমি পরিপাটি শয্যায় শুয়ে তাকালাম কাঁচের শার্সী গড়িয়ে পথের দিকে, মনে হলো শুনলাম,হাইরাইজারের মাথা দোলানো বিদায় সংগীত।
-
"শেষ সংকেত বেজে উঠলে তখনো কি কোন বাহন - শকট তৈরি থাকে, অন্যলোকের বাসিন্দা হতে।
কারা আসে নিতে ? কারা নিয়ে যায় ? কোথায় চলে যায়, কোন অনন্ত লোকে !?
এ এক বিশাল বিস্ময় বিষময় জগত !"
-
ঘুরপাক খায়,অজস্র কুশলি প্রশ্ন, খেলা করে মস্তিস্ক জুড়ে
ধিক্কার ওঠে,কেন গুছাতে পারিনি আগে!
সবাই তো গুছিয়ে নিলো ভিসন টুয়েন্টি টুয়েন্টি বলে!
সব কাজ গুছিয়ে নিতে পারিনি পরিকল্পনা মাফিক,
অসুস্থ হওয়ার আগেই, কেন !?
সহধর্মিণী ও সন্তানের জন্য মাথা গুঁজবার ঠাঁই,
নিদেন পক্ষে একটা তিন কামরার ফ্ল্যাট
কোথায় আছে ইন্স্যুরেন্স ফাইল,ব্যাংকের চেক বই,
লকারের চাবি, ক্রেডিট কার্ড এর গোপন সংকেত
কার কাছে আছে কত দেনা,আমি কার কাছে কত পাবো ? 
জীবনে কি শেষ হয় সব লেনদেন !
শেষতোক মহাপ্রলয়, রোজ কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে!
-
নতুন গজিয়ে ওঠা মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ,
বড় বড় শপিংমল, মাল্টিপ্লেক্স বিল্ডিং,
পাক খাওয়া ফ্লাইওভারে,সোডিয়াম বাতির সারিতে
পাক খেল এম্বুলেন্স বেশ কয়েকবার।
-
যা হোক এম্বুলেন্সটা এতোক্ষণে পৌঁছাতে পেরেছে বিশাল গেট গলিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফটকে।
আগেই যোগাযোগ ছিল কন্যার বদৌলতে,
একদল ডাক্তার  হৈহৈ করে নিয়ে চললো বেডে
তারপর আর কিছু মনে নেই।
-
চেতনা ফিরলে চারিদিকে চেয়ে চোখ মেললাম
চারপাশে কতগুলো বেড, রোগী যথারীতি পুরুষ -মহিলা
আমার নাকে অক্সিজেন মাস্ক, দু' লিটারে চলমান ,
হাত ফুঁড়িয়ে ক্যানোলা বসানো
স্যালাইন-তার মধ্যে বিবিধ অষুধ ইনজেক্ট করছে
জনৈক সিস্টার।
উৎসাহ ভরা মুখ আমার চারপাশে, কিছু প্রিয় মুখ ---
একজন বলছে,"চেতনা ফিরেছে,চেতনা ফিরেছে "
কৌতুহলী প্রশ্ন সবার, "ভালো লাগছে তো এখন? "


৩০/০৭/২০২১,
ঢামেক,ঢাকা