প্রারম্ভিকা :


যদি আবেগই প্রকাশিত না হয়-কবিতায় আর লাভ কি বলো?
যদিও কাব্যেকরণ অনেক কিছু চায় - থাকনা।
মাঝে মাঝে অনিয়মে কবিতার কিইবা বয়ে যাবে!
উত্তর রাধাকাব্যে নিমগ্ন অনি।


পরিচয়:


রাধিকা। কৃষ্ণেরইতো হবার কথা। মোটা ফ্রেমের চশমায় প্রথম
মাষ্টারনি মনে হলেও-গভির দৃষ্টিতে মেলে প্রশান্ত নীলহ্রদের প্রশান্তি
স্বপ্নের কাজল যেন জন্ম থেকেই এঁকে দেয়া কমনীয় চেহারায় ব্যাক্তিত্বের আড়ালেও
ভালবাসার ফল্গুধারা । চঞ্চলা ঝর্ণার মতো, পাইন বনের আড়ালে;
হালকা প্রসাধনীতে কি যে মাদকতা, লাভ এট ফার্ষ্ট সাইট কি একেই বলে?
যেন কত দিনের চেনা আপনার চেয়েও আপন - ফাগুন বনে আগুন লাগা জ্বলন বিহীন!


অনুভব:


বিষন্ন শেষ বিকেল নিবু নিবু আলোতে সময়টা বড়ই অদ্ভুত--চোখে চোখ পড়তেই
আচমকাই বহু যুগ পর যেন আমি রন্ধ্রে রন্ধ্রে কেঁপে উঠেছিলাম অবাক শিহরণে!
মেয়েটিকে দেখেছি। কবিতা ক্লাবের মেম্বারই বোধ করি
কাছাকাছিই হবে বয়স হয়তো কিছু কম, হিসেব নাইবা করলাম;
তবে দুর্দান্ত--উচ্ছল যৌবন পেরিয়েছে অনেক আগেই সেটা চোখবুজে বলা যায়।
কবিতার সাথে বন্ধুত্ব আমাদের ধীরে ধীরে কাছে টেনে আনে


আবৃত্তির সময়গুলো তার মুগ্ধ চেয়ে থাকা -আবেগে রং ছড়াত
প্রগাঢ় বোধে তার দৃষ্টির আবেগটুকুকে ছড়িয়ে দিতাম আবৃতিতে-হালকা হাসি কি খেলে যেত ঠোটে?
রাধা কি বুঝে ফেলতো আমার এই আবেগের কারিগরি! কি জানি?
শেষবেলাতে আর কষ্ট পেতে মন চায় না।
তাই বিভ্রম ভেবেই পাশে রেখে চলি।
চাওয়া পাওয়ার হিসেবের ভেতরে আর কত লড়াই! সমাজ, সামাজিকতা, ধর্ম
পোড় খাওয়া দুজনের জীবনে আর গদ্য আনতে সাহস করি না কেউ।
নিয়িমত আবৃত্তি চলে-মুগ্ধতার আবেশে রং চড়ে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় !



সমপর্ন:


একদিন। কি মনে করে- ফেরার তাড়াও ছিলনা।
তার নিরব চোখের আহবান -নিরবেই দুজন পাশাপাশি
ক্লাবের পাশেই স্বচ্ছ জলের শান্ত নদী তীর ধরে হাঁটতে থাকি
রাধা কি কিছু বলতে চায়? আমিও কি কিছু শুনতে চাই?
প্রকৃতি কি আগেই সাজিয়ে রেখেছ! কোন গোপন অভিসন্ধিতে
নইলে এমন হয়! যেন মোহনার টানে ঝর্ণার ছুটের চলার মতো
আমরাও কি না জানা কোন মোহনার সন্ধানেই হাটছি!
এই প্রথমবিশ্বের দুনিয়ায় এমনতো হবার নয়


সবই যেন ছকে বাঁধা, প্রেমটাও! ভালবাসা কটি শব্দে
কিছু দিবসে আর আনুষ্ঠানিকতায়। যুগ যুগান্তের অভ্যাসের বাইরে
এ কেমনতর অনুভব! একেবারে সেই কিশোর বেলার আবেগেই
হটাৎ তার হাতটা ছুঁয়ে হাটতে ইচ্ছে হলো। সকল সৌজন্যতার কবর দিয়েই!
যেন বিদ্যুৎ চমকে গেল দেহের কোষে কোষে প্রতিটি অনুতে আলোড়ন!
নিজেই চমকে যাই-যৌবনের প্রথম স্পর্শে কত কত যুগ আগে এমন হয়েছিল!


রাধা অদ্ভুত ঘোরলাগা চোখে তাকায়! বিস্ময়টা যেন স্বপ্ন পূরণের
তবে কি রাধাও অপেক্ষায়ই ছিল! সমপর্নের! কেবল আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায় দুজনেই
ঘোর লাগা ঘোরে অনুভব করি তাঁর আঙ্গুল ঠোঁটে ছুঁয়ে
বুঝলাম তাঁর বুকেও শ্রাবণ বর্ষন, শুধু গঙ্গা স্নানের অপেক্ষা


সেদিন উচ্ছল চোখে তাঁর মুখের দিকে মুগ্ধ চেয়েছিলাম
"তোমার চোখে সময়কে যদি আঁটকে দিতে পারতাম" - রাধা হেসে বলেছিলে-
"পাগলী --সময়কে আটকে রাখা যায়!" আমার নির্বিকার জবাবে
দৃষ্টির তাচ্ছিল্য... যেন সময় তাঁর আঁচলে বাঁধা! ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয় সব!
সুখাবিষ্ট আমি আপন মনে শুধু বলতে পারলাম -তথাস্তু।
আত্মসমর্পণ অনিবার্য ছিল বুঝেছিলাম তাঁর গভীর সমপর্ণে ।।


বিচ্ছেদ:


আচমকাই হারিয়ে গেলাম দুজন। একই শহরে থেকেও দ্যাখা নেই কত দিন, মাস বছর
মানুষের জীবনের স্বপ্নের সীমানা আসলেই কন্টকাকীর্ণ।
হৃদয়ের মূল্য হারায় রীতি-নীতি, সামাজিকতার পাথর চাপায়
দুটো হৃদয় যেন শত জনম পর- এক পলকের মিলনে আবার বিচ্ছেদ শত জনমের।


আক্ষেপ:


তাকে বলা হয়নি কখনো—তাঁর মুগ্ধ শ্রোতৃতে আমি আবিষ্ট হয়ে পড়তাম।
বলা হয় না তাঁর অসাবধানতাবশত আবৃতিতে তন্ময় হয়ে আঁচল খসে গেলে
তাঁর দেবি রুপে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়তাম
কিংবা কি যেন! আমার কাছেই কেবল অদ্ভুত লাগে তার সব কিছু!


মাঝে মাঝে আমার রাতগুলো এতোটা বিমর্ষ হয়
বিস্তীর্ণ হৃদয় জুড়ে যেন এক শূন্যতার হাহাকার!
মধ্যরাতের বিশাল নিঃসঙ্গ পাহাড়টাকে খুব আপন মনে হয়!
ইচ্ছে করে দু'হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরি!
গ্রীক দেবতাদের মতো উপড়ে ফেলে চিৎকার করি শিঙ্গানাদে।


বোধ


রাধা-শুধু তোমায় বলছি -
আমার কবিতার খাতা তোমার নামে করে দিলাম
পাতায় পাতায় ছোঁয়া তোমার স্পর্শ আমার হবে বলে
তোমার সর্বাঙ্গে জড়িয়ে থাকব ভালবাসার পরশে।।