একটা ঘর, ধূপকাঠির ঘ্রাণে ভরা,
বালিশে লেগে আছে বউয়ের কাঁচের চুড়ির সুর—
হঠাৎ একদিন, সে ঘরে ঢুকে পড়লো
ন্যাপথলিনের গন্ধ,
ঠিক যেন সদ্য মারা যাওয়া স্বপ্নের শবদেহ।
ধর্ম নয়, আজকাল সে গন্ধে
লুকিয়ে থাকে কষ্টের মৃত্যু পরোয়ানা,
একটা সদ্য বিবাহিত মেয়ে—
যার কপালে লাল সিঁদুর,
যার শাড়িতে কাশফুলের হাওয়া,
আজ সে দাঁড়িয়ে থাকে হাসপাতালের দরজায়
স্বামীর রক্তে রাঙানো গেরুয়া লাশের সামনে—
বলো, সে কি ঈশ্বরের আশীর্বাদ
নাকি নরকের অভিশাপ?
একটা শিশুকে কোলে তোলার বদলে,
তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে এলো তার আত্মীয়েরা,
তার মায়ের চোখে বিষণ্ণ ধূপকাঠির ধোঁয়া,
তবু কেউ বলে, "এটাই ধর্মের পথ!"
ধর্মের পথ, নাকি মৃত্যুর ব্যুহ?
আল্লা নেই, যীশু নেই, কৃষ্ণ নেই,
যদি তারা থাকতো,
তবে কি ছোট্ট মেয়েটার খেলনা-বাটি
রক্তে রাঙা হয়ে যেত?
তার বাবার বুকটা কি গুলির শব্দে
ভেঙে যেত বাদ্যযন্ত্রের মতো?
তাদের চোখে ঈশ্বর ছিলেন
একটা উজ্জ্বল দীপ্তি—
কিন্তু আজ ঈশ্বর গন্ধে মিশে গেছেন,
যেন পুরনো আলমারিতে রাখা
ন্যাপথলিনের টুকরো,
যা পোকার হাত থেকে বাঁচায় বই,
কিন্তু পুড়িয়ে ফেলে কাব্য।
মানবতা আজ লুকিয়ে পড়ে,
পোকামাকড়ের মতো পালিয়ে যায়,
ধর্মের নামে আতর বোতলে
মিশে যায় ন্যাপথলিনের বিষাক্ততায়।
ন্যাপথলিনের গন্ধে হারিয়ে গেছে
গীতা, বাইবেল, কোরআনের মানে,
মানবতা আজ ঘরছাড়া
আর ধর্ম এক বিষাক্ত সুরভি—
যা আতর নয়, আতঙ্ক।
সেই মেয়েটি, যে স্বামীর হাত ধরে
স্বপ্নের জাহাজে উঠেছিল,
আজ তার হাতে নেই হাত—
শুধু একমুঠো গন্ধ, মৃত প্রেমের,
এ যেন গন্ধকের বিষ,
যেখানে ধর্ম নয়, রাজনীতি কথা বলে।
বলো, কোন ঈশ্বর চায় এই রক্ত?
কে বলে—মানবহত্যা পুণ্য?
কে শেখায়, শিশুর কান্না
হোক অর্ঘ্য কোনো অলৌকিক ক্ষমতার কাছে?
ন্যাপথলিনে মোড়া আজ ধর্মের বই,
আল্লা, যীশু, কৃষ্ণের বাণী—
শুধু কাগজে লেখা,
জীবনে নয়।