এই আমার প্রিয় ক্যাম্পাস
এখানে ভোর হয় শিশির পতনের পিনপন নীরবতা নিয়ে
এখানে সূর্য ওঠে আগামীর, এখানে সূর্য ওঠে সম্ভাবনার, এখানে সূর্য ওঠে দিগ্বিজয়ীর।
এখানে চর্চা হয় জ্ঞানের, এখানে বিপ্লব হয়
এখানে চর্চা হয় রাজনীতির, এখানে মিছিল হয়
এখানে চর্চা হয় নৈতিকতার, এখানে প্রতিবাদ হয়
এখানে চর্চা হয় দেশপ্রেমের, এখান থেকে সৃষ্টি হয়।
এই আমার প্রিয় ক্যাম্পাস
যুগ যুগ ধরে বয়ে চলে শুধু গৌরবের ইতিহাস
এখানে ইতিহাস আছে প্রতিবাদী আটচল্লিশের
এখানে ইতিহাস আছে বাহান্নোর বেদনার
এখানে মাটির বুকে কান পাতলে এখনো শোনা যায় সালাম-বরকতের "মাতৃ ভাষা বাংলা চাই" স্লোগান।
এখানে ইতিহাস আছে উনসত্তরের ১১ দফা চেতনার
আসাদের রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে ঐ গাছের পাতায়, ঐ ঘাসের ডগায়, ঐ পিচ ঢালা রাজপথে।
এখানে ইতিহাস আছে একাত্তরের নির্মমতার
এখানে ইতিহাস আছে কালরাতে হায়েনার নৃশংসতার
জগন্নাথ হলের প্রতিটি দেয়ালে কান পাতলে এখনো শোনা যায় নিরীহ ছাত্রদের আর্তনাদ, ঘাতকের মেশিনগান আর বুলেটের বিভৎস আওয়াজ।
রোকেয়া হলের ইটের প্রাচীর ভেদ করা আমার বোনেদের সেই রাতের করুণ চিৎকার আজও ভেসে বেড়ায় এই ক্যাম্পাসের বিশুদ্ধ বাতাসে।
এখানে আছে পচাশির ঘৃন্যতম স্বৈরাচারীর ইতিহাস
স্যার এ এফ রহমান হলের পাশে জেগে থাকা সারি সারি জারুলেরা আজও ভিজে আছে সেদিনের সেই প্রতিবাদী তরুণ বসুনিয়ার রক্তে।
এই আমার প্রিয় ক্যাম্পাস
এখানে যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
মধুর ক্যান্টিনের প্রতিটি চায়ের কাপ,
শহীদ মিনারের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা রক্ত লাল পলাশ,
ফুলার রোডের সুউচ্চ রক্তিম লাল কৃষ্ণচূড়া,
কলাভাবনের সামনে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকা সুপ্রাচীন বট বৃক্ষ,
এখানে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিচ ঢালা পথ, পথের প্রতিটি ইট, বালি, ধূলিকণা;
কালে কালে যারা ভিজেছে শহীদের রক্তে, প্রতিবাদীর রক্তে।
এই আমার প্রিয় ক্যাম্পাস
এখানে প্রতিবাদ হয় কবি কন্ঠে কবিতায়,
এখানে প্রতিবাদ হয় গানের সুরে,
এখানে প্রতিবাদ হয় মঞ্চস্থ কোনো নাটকের দৃশ্যে,
এখানে প্রতিবাদ হয় মিছিলের স্লোগানে স্লোগানে,
এখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কালে কালে ফুসে উঠেছে টিএসসি'র প্রতিটি চায়ের কাপ।
এই আমার প্রিয় ক্যাম্পাস
এখানে সহস্র স্মৃতি ফেলে গেছে একদিন আমার পিতা,
প্রিয়তমার কপালে ঘনিষ্ট চুম্বনের সাক্ষী রেখে গেছে ফুলার রোডের ঐ শতায়ু তেতুল বৃক্ষকে।
এই ক্যাম্পাসে স্মৃতি রেখে যাব আমিও
প্রিয়তমার কনিষ্ঠা ধরে হেঁটে যাওয়া মল চত্ত্বরের প্রতিটি জারুল, প্রতিটি কৃষ্ণচূড়া, ঐ চালতার ফুলও সাক্ষী হয়ে থাকবে আমাদের দৃষ্টির আলিঙ্গনের।
একদিন হয়তো আমাদের অনাগত সন্তানও ধুলি মাড়াবে এই
ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠের-
অংশ নেব বিজ্ঞানে, রাজনীতিতে, প্রতিবাদে
হয়তো সেও একদিন কোন এক গোধূলিতে  প্রিয়তমার হাত ধরে হেঁটে যাবে একই সে স্মৃতির মলচত্ত্বর ধরে।
নাম না জানা হাজারো তরুনীর অভিমানী অশ্রুতে ভিজে আছে এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি ধূলিকণা।
এই আমার প্রিয় ক্যাম্পাস
যেখানে এই দেশ দেখেছিলো লাল সবুজের প্রথম উড্ডীন পতাকা।
যেখান থেকে রচিত হয়েছে এই বঙ্গভূমির বিজয়ের শত শত ইতিহাস।
এই ক্যাম্পাস শুধু শিক্ষক-কর্মচারী বা ছাত্রজনতারই নয়,
এই ক্যাম্পাস আমাদের সমগ্র বাঙ্গালীর চেতনার।


বিপ্লব কুন্ডু
২০২০০৮২৬।
উৎসর্গ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে।