"দুটি চোখে দুটি মায়াবী দিঘি"
       বিপ্লব দাস


ক্ষণে ক্ষণে ডুব দিতে ইচ্ছে করে ওই দুটি চোখে।
এই জরাজীর্ণ শহরের চারিদিকে সেই মায়াবী বালিকাকে কখনো দেখিনি ।
কতদিন মন তরঙ্গের গোপন ঢেউটা
তন্ন তন্ন করে খুজবে শহরের খসড়ায়।
দেওয়ালে দেওয়ালে  নিরাশার রং,
ঘর থেকে বারান্দা, তারপর আঙিনায় বহুদিন পরেনি আলপনা
সবুজ ঘাসের কচি মেরুদন্ড ভেঙ্গে ভেঙ্গে শহর মানচিত্রটা
সেলাইয়ে সেলাইয়ে করি নবাগত রেকর্ড।
পেয়েও, তবু না-পাওয়ার যন্ত্রণায় বুকটা টনটন করে ওঠে,
মরুভূমির মালঞ্চ নিয়েই কেঁদে ভাসাই।
দূর বহুদূর থেকে মায়াবী কণ্ঠস্বর ভেসে ওঠে
উল্কা পড়ার আগেই যেন
ফিসফিস করে বলে ওঠে– পাগল হলে।
আমিতো আছি, ধূধূ প্রান্তর পেরোলেই সবুজথোকা ঘাসে,
বাঁশের সাঁকো পেরোলেই, সোনালী ধান ক্ষেতে,
গর্ভবতী গোধূলির রঙে,
বাঁশ বাগানের করমড় তীক্ষ্ণ আওয়াজে,
এক ঝাঁক দিকভ্রান্ত পুকুরের কিনারায়  রাজহাঁসের ভিড়ে,
সন্ধ্যাদীপের পলতে নেভা দুর্লভ গন্ধে।
হর্ষময় গাছের কচি পাতায়।
এগোতে এগোতে পিছিয়ে যাই তবে সেই কণ্ঠস্বর ঠিকানায় পৌঁছাতে পারিনি..
মনে এক একাকী বাউন্ডুলে ভাবনা তির তির করে ওঠে।
দিনের স্তরে স্তরে ঝাপসা অনুভবের জলসায়
আমার  অব্যক্ত কণ্ঠস্বর ডুবে থাকে।


নেই, সে কোথাও নেই।
তিমিরের মুন্ডুতে আমার সজ্জিত  দুঃখের অভিধান।
এই নিধুয়া তিমিরেই তাকে দেখতে পাই
দূর্বা ঘাসের উপর শিশির ফোঁটার মতো সুখটুকু টুলটুল করে।
স্বপ্নে আসে সেই মায়াবী বালিকা,
তার মুখখানি দেখিনি...
ভোরবেলা মানুষের ঘুম ভাঙার আগেই ধানসেদ্ধ করে,
ধানসেদ্ধ করতে করতে ঘুমন্ত ঘোরে  তার বাষ্পসিক্ত কবিতার   হাজার হাজার লাইনগুলো মস্তিষ্কে হানা দেয়।


স্বপ্নভঙ্গ হবার পর আমি  হতাশ হই,
তারা যেন কোথায় হারিয়ে যায়।
আয়নার সামনে দাঁড়ানো সূর্যটা,
চিবুকে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে, শুধু ভাবতেই থাকে।
বড্ড অসহায় লাগে, কেন পারি না  মনের কথাগুলো বুঝতে?
তবে তার দু'টি মায়াবী চোখে দুটি মায়াবী দিঘি আছে।
নিত্য স্নান করি আর পুরুষালী  কন্ঠে শিস দিতে থাকি।
প্রতিটা স্বপ্নেই পাখির পালক, মাছের আঁশের মতো কিছু ছাপ রেখে আসি
তবুও ভুলে যাই,
মনে থাকে না কিছুই
আমার।


সেই মায়াবীনুপুরের  আওয়াজ হন্যে হয়ে খুঁজে যাই প্রতিটি আহত মধ্যাহ্নে।


রচনা–বিপ্লব দাস
তাং–৭/০২/২০২২