কিছু মনে রাখেনি
বিপ্লব দাস
যে ছেলেটা কারণে-অকারণে বাবার কাছে কঞ্চি দিয়ে
মার খেত প্রচুর
গা ফেটে চৌচির, তবুও সে দৌড়ে পালাতো না
ভুল না করেও, তার মনে এ শিক্ষা পরম পূজনীয়।
টুপ টুপ করে মাটিতে অশ্রু পড়াই ছিল মূল্যবান সম্পদ।
পাশের বাড়ির জেঠিমা বলতো–এইভাবে ছেলেটাকে কেউ মারে,
তোমার পা ধরি ঠাকুরপো এইভাবে মেরো না।
আমৃত্যু মনে রেখেছিল জেঠিমা,ছেলেটা কিছু মনে রাখেনি।
বাবার তখন প্রচুর খুচরো টাকা, মাছের দোকান
তবুও দিত না ।
বাবার বন্ধু সুজিত কাকু –ফাইভে হাফপ্যান্ট পরা অবস্থায়
স্কুলে যাওয়ার সময়ে ছেলেটিকে বহুবার রাস্তা পার করে দিয়েছে।
আজও দেখা হলে বলে তুই অমুকের ছেলে না
সুজিত কাকু ঠিকই মনে রেখেছে, ছেলেটা কিছু মনে রাখেনি।
মেলাতে খেলনা গাড়ি, পুজোতে পোশাক নেবার জন্য
কোনদিন জেদ ধরেনি ছেলেটা।
ঈশ্বর এক অদ্ভুত ভাবনা দিয়েছে ছেলেটাকে
শুধু মাথা নাড়তো, তার কিছু চাইনা
ভাবতো বাবার ভীষণ কষ্ট হয়।
শুধু বাবার মুখের দিক চেয়ে থাকতো।
বাবা কোন উৎসবেও কিছু কিনে দিত না,
এইভাবে জীবনে কত উৎসব পেরিয়ে গেছে
কিছুই জানে না
নিজের ছায়ামূর্তি নিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিয়েছে
মন খারাপের দিনগুলি।
সে-সব আর কিছু মনে রাখেনি
পাশের বাড়ির পিসি ঠিক মনে রেখেছে
কাউকে না কাউকে ঠিক গল্প শোনায় ছেলেটার।
বাবাকেই আজ ছেলেটা ,ছেলের মত ভালোবাসে,আদর করে
শরীর খারাপ হলে ওষুধ, বাড়ি না ফিরলে ঘন ঘন ফোন
রাতে ভাত না খেলে জোর করে খাইয়ে দেওয়া
প্রতি পুজোতে পোশাক কিনে দেওয়া
না চাইতেই পঞ্চাশ টাকার বদলে একশো।
বাবা নিশ্চিন্তে ঘুমায়, কোন চিন্তা নেই
ছেলের কথা একবিন্দু ভাবে না আজও
হাড়ভাঙ্গা খাটুনির কথা।
তবে আজও পিঙ্কির দিদা বলে
ওর মত ছেলে পৃথিবীতে পাওয়া যাবেনা
সাত জনম তপস্যা করেও।
অক্ষরে অক্ষরে মনে রেখেছে বৃদ্ধ দিদা।
ছেলেটা কিছু মনে রাখেনি।
আঁধার নামার নাম প্লেটে ছেলেটার নিঃসঙ্গ মন ব্যথা,
চেপে থাকে একা, প্রকাশ করে না।
তবে কোনোদিন কখনো তার মত একটি ছেলে পেয়ে গেলে
শোনে তার জীবন কথা
মোছে তার চোখের জল।
শুধু কিছু বলে না তার কথা
কিছু মনে রাখে না তার কথা।
রচনা–বিপ্লব দাস
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১