মালতি তুমি ঈশ্বরী নারী
   বিপ্লব দাস


এই শীতেই চলে গেলে মালতি–
শোকের মালা পরিয়ে।
তোমার আঁকা দেওয়ালে জল রং গুলো ছুঁয়ে
আঁধারের চুপটি করে কাঁদবো
সেই সঙ্গী আর হবে না তুমি।
তোমার হাতের হাতপাখাখানি পড়েই থাকবে লোডশেডিং এ
প্রবল তৃষ্ণায় জিভ বের করে।
তোমার ছোঁয়া ঐশ্বর্য হাত দেব না কখনো প্রিয়তমা।
লক্ষ্মীর মত শান্তি দিয়েছো।


পালক ছড়িয়ে সুখ দেবে না আর কোন বসন্তে।


একাকিত্বের হাজারও অগ্নিশিখা জেলে উঠেছে আমার চারপাশে–
আমার দর্পণে
আমি আর মুখ দেখাবো না।
নিশিনিদ্রা জেগে আচমকাই বলবো–মালতি,মলতি–
জল দাও, জল দাও, আমায় একটু জল দাও
আর, আর আমার চশমাটা কোথায়?
সুন্দর শব্দটি আর আসবে না মুখে
সুন্দরতম বাঁশি আর বাজবে না উৎসবে।
আর সবুজ রাঙ্গা চোখ ধাঁধানো শাড়িটা পুলক ছড়াবে না
মালতির শরীরে।


ঝিলের ধারে বসে থাকা আমি এখন মাছরাঙ্গা।


এই সন্ধ্যায় আমায় কে চাঁদর জড়িয়ে দেবে?
কে জড়িয়ে উষ্ণতা দেবে?
ধুলো ওড়া ধুলির মত তোমাকে তো ভুলে যেতে হবে।
জানি আর চা সন্ধ্যা  হবেনা কোনদিন।
ভালো লাগবে না কার গান বৃষ্টি
যেখানে দুজনে ভিজেছিলাম গা এলিয়ে
দপদপে যন্ত্রণা– ঠিকানায় আমায় যোগ দিয়ে গেলে।
আমার কর্ণযুগল আর শুনবে না–" ওঠো ওঠো গো খেয়ে নাও অনেক রাত হলো"।
বা বলবে না তোমার ওষুধ নিয়ে এসেছে রাহুল মিলিয়ে নাও
বা হাত ধরে নিয়ে যাবে না স্নানের ঘরে,
ডাক্তার চেম্বার এ।
আমার নিয়তি ললাট লিখনে অবহেলার চুম্বন–
জন্মান্তর পলকহীন বিধাতা আঁখিতে।।
কোটরে ঢুকে থেকে নখের আঁচড়ে
যন্ত্রণার প্রবল প্লাবন সৃষ্টিছাড়া
গোধূলি মায়া দেখা অসহ্য বিরক্তিকর।
আর তো পাবো না স্বস্তি পূর্ণ আঁচল ছোঁয়া।


ঈশ্বরের দরজায় আজ প্রাণভিক্ষার আর্জি জানাবো না–
হাজার হাজার করুণা গান শোনাবো না
মালতিকে  দিতে হবে দিতে হবে বলে
মেনে নিয়েছি, অবুজ মন কে বুঝিয়েছি ,মালতি মিশে গেছে সমীরণে।


কারণ–" পৃথিবীতে বেঁচে থাকার পূর্বে যে নারী হাজার টাকার ধুপকাটি কিনে আনতে পারে–
তার মৃত্যুর সময় ধুপকাটি কিনতে না হওয়ার জন্য"।
এইজন্যই মালতিকে ঈশ্বরী তুলল মনে হয়।
খরখরে পাতাগুলো মালতির  আঙ্গুলি স্পর্শে জীবিত হয়ে যেত।


ঈশ্বরী মালতি আমি আর দুঃখ পাবো না তুমি নেই
দীর্ঘ সংসার জীবনে আঙুল পুড়িয়ে
জীবনটা তামা তামা করে আমায় করেছে ফুলবাবু।
সাত জনমেও পরিশোধ করতে পারবোনা, আমি অক্ষম।


তবুও এই ভাঙ্গা জীবনে একটি জিনিসের প্রতি  ঋণী হতে চায় –
তোমার হাসি ভরা ছবি প্রেম খানি দেখতে পারি যখন ইচ্ছা হবে।।



       রচনা– বিপ্লব দাস
      ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১