মহুয়া,
বাবাকে মনে পড়ে তোমার? আমার বাবা। সেই আদিনাথ পাহাড়ের চূড়োয় আমাদের দুজনকে পাশাপাশি দেখে একেবারেই অবাক হন নি। অথচ শালিকগুলো বড্ড বেশি বেয়াড়া আর পাজি ছিল। কেমন হ্যাংলার মতো চোখ গোল গোল করে আমাদের দেখছিল আর চেঁচাচ্ছিল। পরে বুঝেছি, বাচ্চাকে হারিয়ে মা পাখিটা কাঁদছিল। ভেবেছিল বুঝি আমরাই তার বাচ্চা চুরি করেছি। তাই চেঁচিয়ে সব শালিককে এক করেছিল।
হিজলের ডালে দোয়েলের বাচ্চা চুরি করা সাপটাকেও আজকাল আর দেখিনা। আধমরা গাছটা মরতে মরতে আজও বেঁচে আছে। এ গাছ নিয়েও কী তুমি কম কান্ড করেছো?
সেদিন ছিল শরতের বিকেল। ভাতঘুম ফাঁকি দিয়ে এখানে এই হিজলের তলেই বসেছিলাম। তুমি বার বার মাটি দলা পাকিয়ে টুপ টুপ জলে ফেলছিলে। আমার দেখতে খারাপ লাগছিল না। ঝামেলা পাকালো এই সাপ। অনেক দূরে হিজলের ডালে সাপটাকে দেখে তোমার সে-কী চিৎকার। শেষমেষ জলেই ঝাঁপ দিলে। আমার শহুরে পৌরুষ তোমার শরীরের সালোকসংশ্লেষণে যতটা পারদর্শী ছিল ঠিক ততটাই আনাড়ি ছিল তোমাকে জল থেকে তুলে আনতে। পারিনি আমি। তবু তোমার সেই ডুবে যেতে যেতে বাঁচবার আকুতি নিয়ে তাকানো দৃষ্টিতে আমি অবিশ্বাস দেখিনি এতটুকু।
মহুয়া, তুমি ভালবাসতে বাসতেই মরেছো। মরা গাঙের পাড়ে আজও সেই মাঝ বয়েসি হিজল তরু তোমায় খোঁজে। অথচ তোমার কাপুরুষ প্রেমিক তোমার অস্তিত্বের কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
ভালো থেকো,মহুয়া।
ইতি,
তোমারই
অনিরূদ্ধ।