জীবিকার টানে, সেদিন ভোরে
গেলাম রাজধানী ,
সবকিছু তখন কুয়াশায় মোড়া ,
শীতটা ছিল, হাড় কাঁপুনি।


সময়ের আগেই পৌঁছে গেলাম,
কাকডাকা ঐ ভোরে,
আবছা আলোয় কোনরকম দেখি ,
কী যেন একটা নড়ে ?


রাস্তার ধারে কাপড়ের তলে ,
দুলছিলো একটানা ,
ভাবলাম আমি ,খেলিতেছে বুঝি ,
যুগল কুকুর ছানা।


খানিক বাদে ,তাকিয়ে দেখি
হামাগুড়ি দেয় শিশু ,
ভাবলাম আমি দেখিলাম বুঝি ,
খ্রিষ্টীয় প্রভু যীশু।


হাত বাড়িয়ে কে যেন ধরলো ,
আমার দেখা যীশুকে ,
তাড়াতাড়ি আমি পা বাড়ালাম ,
দেখিলাম তারে যেদিকে।


ছানা ভরা চোখে তাকিয়ে রইলাম,
কথা থেমে গেল মুখে ,
যীশু দেখি আমার, খেলা করছে ,
তাহার মায়ের বুকে।


আমাকে দেখিয়া বিরক্তি ঝাড়িল ,
এইখানে কি চায় ?
কোন কিছু তারে না বলিয়া ,
দাঁড়িয়ে রইলাম ঠাঁই।


আশেপাশে আমি তাকিয়ে দেখি ,
আরো অনেকেই শুয়া , বসা।
একটু,একটু কেটে যাচ্ছে,
নগরের কুয়াশা।



মাথার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ,
বহুতল কত ভবন ,
শরীরে যেন হুল ফোটাচ্ছে ,
হিমেলগামী পবণ।


শীতে জড়সড় , কাপড় মুড়িয়ে ,
উঠিয়া সে বসিল ,
আমার দিকে তাকিয়ে শুধু,
মলিন মুখে  হাসিল।


কোন কামেতে আইছেন সাহেব ?
কইবেন একটু শুনি !
গত রাইতে আমার এমনি গেছে ,
অনেক পেরেশানী।


মাঝ রাইতে  ডাইকা তোলছে,
কয়েক ডজন নেতা ,
হাতে আমার ধরিয়া দিছে ,
পাতলা একখান খেতা।



ছবি , টবি তুলবো বইল্যা ,
সবাই টানাটানি ,
টানের জোটে ছিড়াগেছে ,
পাতলা খেতাখানি।


বললাম তারে নেতা না আমি ,
তোমাদের মত মানুষ ,
শিশুটা তোমার দেখে আসলাম ,
আমায় দিয়ো না দোষ।


এই বলিয়া এক ছুটেতে
গেলাম পাশের দোকানে ,
আসিয়া দেখি কোলের শিশুটা
তাকাইয়া আছে পথ পানে।


খাবারের পুঁটলাটা হাত বাড়াইয়া
দিলাম তাদের খেতে ,
দেখিয়া শিশুটি উথলিয়া উঠিল ,
খুশিতে উঠল মেতে।



দু-গন্ড বেয়ে জল পড়িল
বুঝিতে পারিনাই ,
তাড়া ছিল বলে ,বলিলাম তারে ,
এখন তবে আমি যায়।


শিশুটি তোমার দেখিয়া রাখিও,
পার যদি যাও বাড়ি,
কোন, ঠিকানা নাই গো সাহেব ,
বলিল সেই নারী।


রাস্তাতেই মোরা মানুষ হইছি ,
কাটে বারো মাস এথা ,
সবাই চলে নিজের মত ,
কয়না মোদের কথা।


দেশের কথা চিন্তা কইরা ,
নেতারা পেরেশান ,
আমাগো তারা দেখেনা চোখে ,
তাইতো এই স্থান।



আপনে সাহেব বড় ভালা ,
বুঝেন গরিবের কথা ,
আপনে বুইঝা করবেন কি ?
না, বুঝলে দেশের মাথা।


কাজ শেষে ফিরতি পথের ,
ধরতে গেলাম বাস ,
চোখে শুধু ফুটিয়া উঠিল
ফুলবানুদের পৌষমাস ।