দাওয়াত
বোরহানুল ইসলাম লিটন


চল না দোস্ত দেখবি মোদের ছোট্ট সবুজ গাঁ,
যেখানে আমার ভাই বোন আছে আর আছে আমার মা।
বাড়ি খানি মোদের জীর্ণ জরা
তবুও থাকে শান্তিতে ভরা
বিশ্বাস না হয় দেখবি গিয়ে তোর নয়ন দুটি ভরে,
আমার জীবন ধন্য কাদের ভালোবাসা আর আদরে।


আমার মাকে দেখলে বলবি জগতে এমন মা আর নাই,
রাগ করবি না যদি দুষ্টমী করে আমার ছোট বোন আর ছোট ভাই।
ওরাই যে আমার নয়নের মনি
সারাদিন ওদের গল্প শুনি
রাত্রি বেলায় ঘুমিয়ে পড়ি শুনে ওদের ই মুখের গান,
শহরে থাকতে তাইতো দোস্ত মোর মন করে আনচান।


আজান শুনে জেগে উঠি ভোরে ঘুমতো হয় ঢের,
ওরা যে কখন বিছানা ছাড়ে একটুও পাই না টের।
দেখি ওজু করতে ব্যস্ত ওরা
মা তো রয়েছে নামাজে খাড়া
ধর ফর করে উঠে পরি দিয়ে জামা একখানি গায়,
মসজিদের পানে ছুটে চলে যাই ব্যস্ত দুখানি পায়।


ছোট গ্রাম খানি চারপাশ দিয়ে পুকুরে রেখেছে ঘিরে,
বটগাছ দুটি কালের সাক্ষী তাই পথচারি চায় ফিরে।
সবুজে ঢাকা ফসলের মাঠে
খড়া বর্ষা নেই কোন তাতে
জ্যোৎস্না রাতে ভেসে আসে যদি কৃষাণ কৃষাণীর গান,
মনখানি তোর ভরে উঠবে হবে পুলকিত দেহ প্রাণ।


গরু বা ছাগলে কখনও যদি ফসল নষ্ট করে,
কলিম দাদার বকুনিতে হাসি পারবি না রাখতে ধরে।
হাঁস মুরগী তে ধান যদি খায়
দাদীর মুখ কে বা আটকায়
সারাদিন ভর বকতে থাকবে গেঁথে কথার মালা,
রেগে গিয়ে তাই দাদা বলে আমার হয়েছে যত জ্বালা।


বিকেল বেলায় মাঠের ভিটায় যত ছেলে মেয়ে যায়,
হরেক রকম খেলা খেলে আর মেতে থাকে ঝগড়ায়।
গোল্লাছুট খেলে হাত দিয়ে হাতে
ছেলেরা হাডুডু ফুটবলে মাতে
কত ভঙ্গিমা কত কথা আর গালি র অন্ত নাই,
তবুও ওরা এক হয়ে থাকে মায়া আর মমতায়।


সন্ধ্যা বেলা কুপি জ্বালানো দেখবি সবার ঘরে,
আমার মা বসে থাকে পাশে ভাই বোন যেখানে পড়ে।
জোনাক জ্বলে ঝিঁঝিঁরা ডাকে
সচকিত হয় শিয়ালের ডাকে
জোয়ান ছেলেরা পাহারা দেয় সারা গ্রাম ঘুরে ঘুরে,
নইলে যে চোরে হাঁস মুরগী সব নিয়ে যাবে চুরি করে।


বিছানা বিছায়ে একসাথে খেতে যখন বসবো রাত্রীকালে,
মুখে দিয়ে বুঝবি মায়ের হাতের রান্না কি কাকে বলে।
যেটা পাবি তুই খাওয়ার মজা
ভুলা টা হবে না এতটা সোজা
পাশে বসে আমার মা কিন্তু তুলে দিবে বারে বারে,
লজ্জা করবি না চেয়ে নিবি যদি কোন কিছু বাদ পরে।


বর্ষাকালে চারদিকে যখন পানি করে থৈ থৈ
আমার ভাই বোন কেঁদে ফিরে ঘরে বগলে নিয়ে বই।
স্কুলে যাবে নৌকার অভাব
দেরি করে আসা মাঝি টার স্বভাব
বিরক্ত হয়ে মা যদি কভু বকুনি ওদের দেয়,
আমার বুক খানি ভরে উঠে তখন মায়া আর মমতায়।


বৃষ্টি হলে কাদায় ভরে উঠোন রাস্তা ঘাট,
বিকেল বেলা বারান্দায় পরে দাদু বসে কাটে পাট।
কত যে মুখে কাহিনী কেচ্ছা
হাসতে হাসতে যাবি যে মূর্ছা
আমার ভাই বোন আরও ছেলে মেয়ে ঘিরে থাকে সারা বেলা,
দেখলে বলবি বসেছে বুঝি শিশু কিশোরের মেলা।


মাটির চৌকিতে ঘুমাতে হবে বিছিয়ে নকশীকাঁথা,
কষ্ট নিবিনা শক্ত বিছানায় যদি লাগে পিঠে ব্যথা।
গ্রামের মানুষ সরল সোজা
মিশলে বুঝবি কতটা মজা
যত দুরে থাকি গ্রামের থাকে পরে মোর মন প্রাণ,
তাই কৃতজ্ঞতায় সর্বদা নতশিরে স্মরি মোর বিধাতার নাম।


পাঁচুপুর, আত্রাই, নওগাঁ।
০১/০১/২০২০ইং।