প্রভাতের আলোর সাথে অনুভব করি-
আমি বেঁচে আছি।
একটা নতুন দিনের আলো নিয়ে আসে
সেই চিরন্তন সূর্য-
চিরসত্য আকাশে সগৌরবে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার আলো।
কিশলয়ে কেমন এক শিহরণ দেখি আজকাল-
ভেবেছি এতকাল,
এ’ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম মাত্র।
কিন্তু, আজ বড় ভাবতে ইচ্ছে হয়
এই নিয়মগুলোর কথা-
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও যেখানে আমরা নিয়ম ভাঙি
সেখানে প্রকৃতি মানে কেন?
তবে কি তাদের বিবেক আছে? বুদ্ধি আছে?
কই? তাদের কর্ণ তো দৃশ্যত নয়!
তবুও কি পায় শুনতে?
কি করে শোনে?
কি করে বোঝে?
কি করে মানে এতো নিয়ম?
বাগানে ফুল ফোটা, পাখির গাওয়া গান,
বর্ষায় বৃষ্টি, শীতের শীতলতা!
এ’সব ভাবতে ভাবতেই চোখ পরে নিজ অস্তিত্বে-
আমার জন্মবৃত্তান্ত কি?
পিতামাতার ভালোবাসার নিদর্শন-
কি করে হয়ে যায় ভ্রূণ হতে শিশু?
কি করে নেয় মাতৃজটরে নিঃশ্বাস?
কি করে করে সে খাদ্যগ্রহণ?
শুনেছি, গর্ভে থাকে শুধুই জল
আর শিশু! সেই জলেই থাকে আবিষ্ট!
নিজের এই বহুকোষী দেহ জলের তলে ডুবিয়ে দেখেছি-
পারিনি! আমি থাকতে পারিনি কয়েক মুহূর্ত!
তবে? ওই সুকোমল নশ্বর দেহ
কি করে কাটায় দশ মাস?
জানি, জলের তলে কণ্ঠ থাকে রুদ্ধ!
যে সৃষ্টি অবধি বলেনি কোন কথা-
সে ভূমিষ্ঠ মাত্রই কি করে করে সশব্দ চিৎকার?
নানান শব্দে কি করে জানায় তার নব আগমন?
প্রশ্নে প্রশ্নে জড়িয়ে পড়েছি নাগপাশ বাণে,
মুক্তির আশ বেড়ে গেছে আমার বহুমাত্রায়-
চাই জিজ্ঞাসার উত্তর।
পথের ধারে বসে একাকী, চিন্তায় মগ্ন-
একা আমি, নিস্তব্ধ পথ;
তবুও আমায় ঘিরে অপার সৌন্দর্যের প্রাচুর্য!
দু’পাশে ধানক্ষেত,
মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ছোট্ট একটি বাবলা গাছ।
দেখি, মাঝবয়েসি এক পুরোহিত দাঁড়িয়ে-
কপলে তাঁর স্মিত প্রশান্তি রেখা, বেশ দীপ্ত।
কাছে গিয়ে, আমার আমার মনের সমস্ত প্রশ্ন করি ব্যক্ত-
উত্তরে পেলাম,
স্থাবর, জঙ্গম, জাগতিক বা মহাজাগতিক
সমস্ত বিষয় নিয়ন্ত্রক ঈশ্বর!
কে ঈশ্বর? কেন ঈশ্বর?
ওরা বলে শিব, বিষ্ণু, ব্রহ্মা... এরাই ঈশ্বর!
তবে ঈশ্বর কি বহু?
আবার একি মুখে বলে,
যা শিব টাই সব!
আমার এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক,
তাঁদের ভারি কথায় পাথর হয়ে আসে।
সাধারণ বিদ্যাবিমুখ পুরোহিত!
কি করে বলে এই অসামান্য কঠিনতর সংজ্ঞা?
কেন ডাকে সে ঈশ্বর কে?
কেন উৎসর্গ করে নৈবেদ্য?
এসবে কি পেয়েছে সে?
ওই মূর্তি কি তাঁকে দিয়েছে মুক্তি?
জীবনের জরা-জীর্ণতায় ধুঁকে ধুঁকে ক্লিষ্ট দেহ তাঁর...। তবুও...?!
সামাজিক প্রেক্ষাপট বলে,
দারিদ্রতায় বসে যাওয়া প্রাণ
স্বার্থ ভিন্ন কোন কর্মে লিপ্ত নয়।
এমনই একদিন চলতি পথে দেখা হল-
গম্ভীর দৃশ্যশক্তির অধিকারী এক পুরুষের সাথে।
তিনি আমায় বলেন-
ঈশ্বর আমার আত্মা,
আমার বিশ্বাস!
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা চলে-
উত্তম স্নেহ, ঘৃত তুল্য স্বাদ তাঁর,
নিঃশ্বাস তুল্য প্রয়োজনীয়,
আর স্নিগ্ধতা তাঁর ভালোবাসার সমতুল্য।
দম যদি পারি জমায় বায়ু পথে-
তবে দেহ পরে রবে ভূতলে,
পরিনত হবে পরিত্যাক্ত বস্ত্রে!
মৃত দেহে প্রাণের আধার গড়েন যিনি
তিনিই প্রাণেশ্বর!
মথের কীট হতে রেশমে জড়িয়ে ডানা পাওয়া
বড়ই বিচিত্র!
জটিল এই জীবন প্রক্রিয়া যার ইচ্ছার প্রকাশ-
সেই অঘটন ঘটন পটীয়সী
তোমার ব্যকুল চিত্তের জিজ্ঞাসার উত্তর।
আদি অনাদি কাল ধরে অদৃশ্য কক্ষপথে-
ঘূর্ণায়মান সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ-গ্রহাণুপুঞ্জ,
একই গতিবেগ বিদ্যমান তার।
সেই অদেখা পথের যে নিয়ন্ত্রক, তিনিই বিশ্ববিধাতা।
এ’ ধরার সমস্ত সৌন্দর্যই তাঁর স্পর্শ,
তাঁর অস্তিত্ব, তাঁর স্পন্দন
চেন তাঁকে তোমারই চারপাশ হতে-
তিনিই তোমার চিত্তের প্রশান্তি প্রদায়ক!
হিতাহিত প্রশ্ন এলে জানবে-
তাঁর সন্তুষ্টিতেই জগতের হিত
তোমাদেরই রুঢ় আচরণে আহত হন তিনি বারংবার!
সৌন্দর্যের মাঝে মানব জাতীকে করেছেন শ্রেষ্ঠ মনুষ্যত্বে।
আজ তোমরা সব ভুলে ভালোবাসো তাঁকে-
তাঁর সৃষ্টিকে-
তাতেই হবে এ ধরণী স্বপ্নের অমরাবতী!
উপদেশ অন্তর নিজেকে বলি,
আমি যার সৃষ্টি তাঁর মহিমা অজানা আমার!
তবে এ কেমন পুঁথি বিদ্যা?
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই-
তাঁকে জানবো যেদিন
পূর্ণ হবে শিক্ষা আর জিজ্ঞাসা সেদিন।