অভিমানী! কে জানে হৃদয় বরণে আমারি স্মরনে ফুলবনে মজে
রঙ্গিলা নিশিতে কত স্বপন দিয়ে গেঁথে ছিল মালা?
তাঁরার মত বুদবুদ করে ফুটতে থাকা চোখের জলের
বিন্দু কণার বুঝিবে কে গভীর মর্মার্থ? অপ্সরীর কান্না ভেজা
গ্লানি মাখা নয়ন মুছে কে দেবে শীতল পরশ? বিজলী চমকানো
বিভীষিকাময় রাতে যখন দরজা জানালা কাঁপতে থাকে, অতন্দ্রি প্রহরী
ভীতু মনে জড়সড়, হাত বাড়ায়ে আমায় খোঁজ।


ভুলে যাও কোন এক জ্যোৎস্না ভরা রাতে নিজের নিখোঁজ সংবাদ পাঠ
করতে করতে চলে গেছি কাঁটা তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে সীমানার ওপাড়ে!
আজি অন্তহীন পথ চলা মেঘের ভাঁজে ভাঁজে। মেহেদী হাতের পরশে
নেচে ওঠে রক্ত শীরা, তোমার নয়ন মাঝে বেঁধে রাখা নীল রাঙ্গা ঘুম
জ্বলে ওঠে আগুনের ফুলকি হয়ে, সেকি! মুছে যাওয়া কাজলে তোমায়
মানায় না সুষমা প্রিয়তম, বেদনার আঁচলে বেঁধে খেয়াল হারিয়েছ।
আমি ঝরে পড়া ফুলের বেদন স্পন্দন বুঝতে পারি দূর হতে।


প্রশান্ত মেঘমালা ঢেউয়ের বিষাক্ত ছোবল দিয়ে তোমায় শাসিয়ে গেল,
আমি বুক পেতে সে আঘাত নিতে পারিনি, খোলা বুকে তোমার মাথা
নিয়ে অভয় দিয়ে বলতে পারিনি "ভয় কিসের পাগলি আমিতো আছি"।
তাকিয়ে দেখা ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি আমাকে আর পোড়ায় না।
নির্ঘুম রাতে আড়ষ্ট হয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখ আর ভাব সেদিনের
কথামালা যেন আর না শোন। শোন "আমি চলে যাচ্ছি নীলা জানি
তোমাকে ছেড়ে থাকতে অনেক কষ্ট হবে, বুকের হাড়গুলো কড়মড়ে
ভেঙে যায়, শ্বাস কষ্টে পৃথিবী আমার অন্ধকার হয়ে আসে"।


জানো নীলা নির্জন অলস বেলা সোনার ময়ূর পেখম মেলে নাচে,
তবুও মনে অন্তহীন গভীর শূন্যতা আমার খেলার সাথী নেই বলে।
দম ফুরিয়ে প্রদীপ নিভে যাওয়ার আয়োজনের মত্ত খেলায় নিজেকে
সঁপে দিয়ে ধুঁয়ার মত খেয়ালিপানায় হারিয়ে যাই। তোমার নির্বাক দৃষ্টিতে
জমে থাকা এক পৃথিবী কালো পাহাড়ের চাপা দীর্ঘশ্বাসে পুড়ে।  


কে আমি? নামহীন পরিচয়হীন গুমোট বাঁধা আঁধার রাতের পথিক।
এই আঁধার মাঝে কে চেনে আমায়? সবার মত তুমি আমায় সন্দেহ কর
না যে আমি নিখোঁজ সংবাদ পাঠের তালিকার প্রথম যাত্রী। তোমার কাছে
অমৃত জীবনের জন্য শরবত চেয়ে সেই যে ঘুমিয়ে গেলাম আর
প্রতিক্ষার পালা শেষ হল না। দেখা হল না অভিমানী চোখের বিরাগ শোভা।