সেই থেকে কৃষ্ণচূড়া গাছ যেনো মাথা নুয়ে
দোল খায় বাতাসের অশ্রুত শব্দে
সময়টা ঊনিশশো বায়ান্নো, বিশে ফেব্রুয়ারি বাঙ্গালী প্রভাতে।
'১৪৪ ধারা' জারি
পক্ষে রক্তখেঁকো সরকার পাকিস্তানি


ঘোষণা আসে মূক, বধির, অন্ধ হয়ে থাকার
ঘোষণা আসে বিকলাঙ্গ হয়ে বদ্ধ দোরে পরে থাকার
সভা, মিছিল, মিটিং সবি বন্ধ ঢাকার রাজবুকে


শুনে রাগে স্তম্ভিত, ক্রোধে ধুম্র গৰ্জ, রক্ত জবা আবালবৃদ্ধবণিতার
অগ্নিশর্মা রাগে, অগ্নিকুণ্ডলি পাকে রক্তের শিরায় শিরায়


মিলিত হয় সন্ধ্যের গোধূলিতে
ঢাকার নওয়াবপুর আওয়ামী মুসলিমলীগের অফিসে
অনুরাগে উদ্বিগ্ন বাঙলা ভাষার নিস্কলুষ প্রেমাস্পদ
বৈঠকে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ
প্রবীণতম নেতা আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে
ভোট নেয়া হয় ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে বিপক্ষে
উক্ত সন্ধ্যের বৈঠকে।


মায়ের ভাষার প্রেমিক লড়বে ভাষা প্রেমে
তাই ভোট আসে শুধু ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে


ঊনিশশো বায়ান্নো, একুশে ফেব্রুয়ারি
দেখা হয়নি কারো ফাগুনের নবমী সূর্যকে
দেখা হয়নি কারো বসন্তের কৃষ্ণচূড়াকে
শুনা হয়নি কোকিলের কুহুতান শীতের শেষ বিদায়ে


পূর্ব সন্ধ্যা হতে একুশের ঊষার দুয়ারে প্রেমিক বিবেক দংশিত হয়
'১৪৪ ধারা' ভঙ্গের
নির্ঘুম চোখে স্বপ্ন ভাসে মায়ের ভাষার স্বাধীনতা


ভোগের বিলাস ব্যাসক্তি ভুলে
সভার তরে জড়ো হয় ভাষা প্রেমিক ছাত্ররা
বেলা ১১ টায় ঢা.বি -র আমতলে
এম.আর আখতার মুকুলের প্রস্তাবে
গাজিউল হক আসেন উক্ত সভার সভাপতিত্বে
উপাচার্য ঢা.বি-র আর গুটিকয়েক শিক্ষক আসেন এ অনুরোধে-
'যেনো ১৪৪ ধারা না ভাঙ্গে '
তবে নিজ দৃপ্ত শপথে অনড় অটল ছাত্র ছাত্রী সব
সাথে আছেন ছাত্রনেতা আব্দুল মতিন ও গাজিউল হক
সভা চলতে থাকে ঘন্টা ধরে
খানিক পরে শ্লোগানে গর্জন উঠে -
"১৪৪ ধারা ভাঙ্গতে হবে! রাষ্ট্রভাষা বাঙলা চাই! "
"১৪৪ ধারা ভাঙ্গতে হবে! রাষ্ট্রভাষা বাঙলা চাই! "
ছুটে চলে মিছিল সংগ্রামী হয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার দৃপ্ত শপথে
অগ্র সৈনিক হয়ে আসেন হাবিবুর রহমান শেলী সে মিছিলে
নাম না জানা অগণিত ছাত্র ছাত্রী মিছিলের শক্তি হয়ে আসে
সংঘর্ষে নির্ভীক মাতৃভাষা প্রেমিক, দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে
রক্ত ছুটে চলে দিক্বিদিকে।


ক্ষান্ত নয় রক্ত পিপাসুর দল
নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ে
বেয়োনেট রক্ত করে হল
বেলা ৩টায় হায়েনি তাণ্ডবে চরম ঢাকার রাজপথ
রঞ্জিত ভাষাশহীদের প্রেমময়ী তাজা রক্তে
যেনো বুড়িগঙ্গা বয়ে চলে সীমারের ফোরাত হয়ে
খণ্ড বিখণ্ড নিথর নিষ্পাপ দেহ
বিক্ষিপ্ত রক্তে রাঙ্গা জুতো সেন্ডেল
ছড়ানো ছিটানো রাজপথের অকৃত্রিম বুকে
তাজা রক্তে থেতলানো সাদা শার্ট, সাদা শাড়ি
ঢাকার রাজকোলে সূর্যের অপ্রতিভ প্রস্থানে
খুঁজে পাই- সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত
আমার ভায়ের তাজা নিষ্পাপ নিথর দেহ
বীরপ্রসবিনী বাঙলা মায়ের বীরবর পুত্র সকল
পড়ে আছে নিস্পন্দ দেহে প্রকৃতির বিবশ খেয়ালে
যেনো শোক বৃষ্টির উপগম উন্মেষিত অমাবস্যা কলার প্রতি ছত্রে!


--ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০১৮ চট্টগ্রাম