প্রবাসী
*******

প্রবাস মানে ঘুম ভাঙে আলোর আগে
ঘড়ির কাঁটা ছাড়িয়ে চলে শ্রমের দহন।
ঘামে ভিজে থাকে চোখের কোণ
শব্দ হীন মুখ ভরে থাকে যন্ত্রনার গান।
প্রবাস মানে একজন মানুষ শব্দহীন যন্ত্র
ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে দীর্ঘশ্বাস যার জীবন।

খাবারে স্বাদ নেই, ঘুমে স্বস্তি নেই
বুকভরা কথা ভাংকার বেডে ঝুলে থাকে
লকারে ধাক্কা খেয়ে ফিরে চুপচাপ নির্জনতা।
তবে টাকা যায় ঠিকঠাক প্রতিমাসে
পরিবার বাঁচে প্রবাসীর ঘামের বদৌলতে
আর প্রবাসী বাঁচে শুধু বাঁচার ভান করে।


পাসপোর্ট ভিসা দেখে সবাই বলে বিদেশ
অনেকের কাছে একটা স্বপ্নের ঠিকানা।
কিন্তু জানে না কেউ স্বপ্ন কেমন করে কাঁদে
চোখে ঘুম নেই- তবু রুমের আলো নিভে যায়
নির্বাক সময়ের স্রোতে বাঁচে শুধু ছটফটানি
পেছনে দগ্ধ হতে থাকে এক আশাহীন আত্মা।

মা প্রতিদিন চোখের জল লুকিয়ে বলে-
"কবে ফিরবি রে তুই, বাবা!’”
বাবা কম কথা বললেও সে জানে
বই-খাতা’র ব্যাগ ছেড়ে ছেলেটা এখন টাকার ব্যাগ
ভাই-বোন জানে না যে হাত দুটো এখন-
ভাঙা নখ আর ফাটা তালুর চৈত্রের জীর্ণতা।

ভালবেসে বিয়ে করা বউ এখন বলে-
"তুমি কি আর ফিরবে?"
ভিডিও কলে এখন আর প্রেম ধরা পড়ে না
আলাপ হয় শুধু ছেলের স্কুল আর বাজারদর।
সন্তান "বাবা" ভূলে গেছে, শুধু একটা নাম শোনে
যে খেলনা পাঠায়, কিন্তু কোনোদিন কোলে নেয় না।

প্রতিদিন একটা মানুষ মরে একটু একটু করে
ফিরে না, কাঁদে না, বলে না কিছু
পাঠায় শুধু টাকায় মোড়ানো নিঃশব্দ কান্না।
প্রবাস মানে শিকড় ভুলে ঘামে, ব্যথায়, অভিমানে
‘আমি’কে হারিয়ে- ‘আমরা’কে বাঁচিয়ে রাখা।
অনেক হাসির ভেতর নিজেকে খুঁজে না পাওয়া।

।।।।।।।।।।।