পঁচিশে মার্চের শেষ প্রহরে


বোরহান উদ্দিন মিল্টন


আমি দেখেছি সেদিন ফাগুনের আগুন ঝড়া দুুপুর,
উত্তাল সেই ঐতিহাসিক ময়দান
ফুঁসছে শুধু দংশিতে শাসকের গর্দান,
মহাপুরোহিত মঞ্চে উঠিলেন অবেলায় -দ্বিধাহীন উচ্চারন
আর নয় সমোঝতা -স্বাধীনতার জন্য লড়ব আমরন,
নানা ছলছূতোয় পশ্চিমা অসূরগন
করে ১৭টি রাত-দিনের কালক্ষেপন,
করে আয়োজন সাজোঁয়া বহর
গোলাবারুদ, গ্রেনেড,
থ্রী নট থ্রী রাইফেল সাথে বেয়নেট,
লক্ষ লক্ষ খাকি পোষাকে
পশ্চিমা হায়েনার দল
যেন ক্ষেপা শুকর অবিকল।


২৫শে মার্চ রাত্রির শেষ প্রহর
ঘুমন্ত শহরে আবছা আলোর বহর
অলিতে গলিতে কিছু দেশ প্রেমিক
সংগ্রামী যুবকের ইতস্তত পদাচার
মনে সবার অশনি শংকেত বাজে বার বার।


হঠাৎ কৃত্তিম ভূকম্পে কেঁপে উঠে শহর
বোমারু বিমানের মৃত্তিকা কাপানো হুংকার
ঘর ঘর শব্দের ট্যাংক, বারুদের ঠাঠা অট্টহাসির
গর্জন বার বার, সাথে ভয়ার্ত মানুষের চিৎকার
খুলে যায় যেন নরকের কপাট আরেকবার,
গোটা শহরে আতংকের ঘোরে উদ্ভ্রান্ত লক্ষ জনতা,
পিলথানা, রাজারবাগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেলিহান অগ্নিকুন্ড
জোয়ানদের শোবার ঘর, ডাইনিং রুম
ছাত্রদের পড়ার টেবিল, বইপত্র সবকিছু লন্ডভন্ড
ছাত্রি হলেও হানাদেয় তারা কেড়ে নেয় সম্ভ্রম,
স্তম্ভিত সভ্যতা, বিপন্ন মানবতা ওরা ঘৃন্য নরাধম।


অনেকেরে আবার হাত পা বেধে তুলে নেয় সাজোয়া যানে,
এভাবেই তারা নরকের ছায়া ফেলে শহরের সবখানে,
পথের দুপাশে ছড়ানো ছিটানো লাশের স্তুপ
মানবতা হায় সাগরে ভেসে যায় সভ্যতা নিশ্চুপ
গাছের পাখীরা পাতার আড়ালে মুখে নেই কোন শব্দ
পৃথিবীর সব প্রাণিকূল যেন নির্বিকার নিস্তব্দ।


নরহত্যায় চেঙ্গিস,হালাকু,তৈমুর,হিটলার
ইতিহাসে ঘৃণ্য হয়ে আজও পায় পৃথিবীর ধিক্কার,
সেই ইতিহাসও আজ হার মানে
হার মানে কলিঙ্গ-কুরুক্ষেত্র
তাই বাংলার প্রতিটি উঠোন হয়েছিল সেদিন রণক্ষেত্র
মুক্তির সাধক এনেছিল শক্তি প্রতিটি ভক্ত বীণে
তখন থেকেই স্বাধীনতা মোরা লিখেছি রক্ত ঋণে।
প্লেটোর রিপাবলিকে মৃত্যু দন্ড পায় প্রতিবাদী সক্রেটিস,
যতবার কবরে যায়, ততবার উঠে আসে গণমানুষের থিসিস্।