রোজই দেখি কাগজ কুড়নো ছেলেটাকে,
বছর বারোর হবে,  মর্নিং ওয়াকের শেষে ফিরি যখন
ঠিক দ্যাখা হয়ে যায় একফাঁকে ।
পার্কের বাইরে ডাস্ট বিনের আসেপাশেই হয়তো থাকে ।
কাঁধে ঝোলানো কাগজের বস্তা, মুখে হাসি
পরনের জামা খানা ছেঁড়া , যখনি কাছে আসি
‘গুড মর্নিং স্যার’, এক মুখ হেসে বলে ।
আমি সাবধান হই, বাঁকা চোখের শাটার খুলে যায় ...
মন বলে সেয়ানা , ব্যাটাচ্ছেলে কোন মতলবে আছে কে জানে ।
এরা সব সমাজের কীট , মন টাও এদের
ডাস্ট বিন ঘেঁটে ঘেঁটে নোংরার হদ্দ হয়েছে তার মানে ।
ধারে কাছে আসতে দিতে নেই এদের ।
উত্তর না দিয়েই দ্রুত চলে যাই রোজ ।
কে জানে কোন বেজন্মা বাচ্চা কোন বেদের ?
আস্ত শয়তান এরা, ভবিষ্যতের চোর ... অপরাধী ।
ধারে কাছে আসতে দেওয়াও পাপ ...
কথা বলা এদের সাথে ... বাপ রে বাপ !  


সেদিন পার্কের বাইরে এসে দেখি ছেলেটা ডাস্টবিনে উবু হয়ে বসে ।
সামনে খবরের কাগজ বিছানো সামনে ।
নির্ঘাত হিন্দি সিনেমার কোনও সুড়সুড়ি দেওয়া রগরগে ছবি হবে  
মনে মনে ভাবলাম । সব রকম বদ গুণ এদের নখ দর্পণে ।
কাছে গিয়ে দেখি , আরে না তো  ... এ যে নব বর্ষের প্রথম সূর্যের ছবি ।
কদিন আগেই পয়লা জানুয়ারি গেছে । ডাস্ট বিন ঘেঁটে ছবিটা বার করেছে ছেলেটা ।
অবাক চোখে দেখছে জল থেকে লাফিয়ে উঠছে নবীন সূর্য ।
চোখে সারা পৃথিবীর বিস্ময়, তন্ময় ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ যেন ।  
মন ভরে গেল । আরে বাপ তুই যে অবাক করলি আমায় আজ ।
তোর মনেও এসব সুকোমল অনুভুতি আছে !
পাশ দিয়ে যাবার সময় মুখ তুলে তাকালো ছেলেটা ।
ডাস্ট বিনের অন্ধকার ঘেঁটে যার সময় কাটে
তার চোখে আজ দেখছি জ্বলছে পবিত্র আলো ।
‘গুড মর্নিং স্যার’ ছেলেটা বল্ল আজও ।
আমার বাঁকা চোখের শাটার আজ প্রথম সোজা হয়ে খুললো ।
বুকের ভেতরে কে যেন করছে আঘাতের পর আঘাত।
ছেলেটার চোখে চোখ রেখে আজ প্রথমবার বললাম ...
‘গুড মর্নিং বেটা ... সুপ্রভাত’ ।