কেমন করে বলবো কে তুমি আমার
                                      সুনিপা চ্যাটার্জি


পেক্ষাপটঃ একটা পাঁচ বছরের ছেলে রোজ দেখে তার বাবাকে ঠাকুর পুজো করতে ।  ঠাকুর ঘরে বিভিন্ন ঠাকুরের ছবি মধ্যে একটি মহিলার  ছবি আছে।  সেই ছবিতে  তার বাবা রোজ একটি করে গোলাপ ফুল দেয় ।  একদিন ছেলেটি বাবাকে জিজ্ঞাসা করল এটা কার ছবি, এ কে হয় তোমার ।  তার বাবা সেই ছবির দিকে তাকিয়ে  যে উত্তর দিয়েছিল,  এটা সেই গদ্য কবিতায় ফুটে উঠেছে ।


কেমন করে বলবো যে আমার কে হও তুমি,
আমার হৃদয়ের স্পন্দন হলো তুমি,
আমার জীবনের সঙ্গীত হলো তুমি,
তুমিই আমার জীবন, তুমিই আমার মরণ,
তুমিই আমার আশা, তুমিই আমার ভালোবাসা ।


আমার নয়নে তুমি, আমার স্বপনে তুমি,
আমার প্রতি নিঃশ্বাসে  তোমার উপস্থিতি,
আমি চোখ বুজে তোমাকে দেখি,
আমি চোখ খুললেও তোমাকে দেখি,
আমার কলমে তুমি, আমার কালিতে তুমি,
আমার সকল লেখায় তুমি, আমার সকল ভাষায় তুমি,
আমার দিনে তুমি, আমার রাতে তুমি,
ভোরের সূর্যোদয়ে  আমি তোমাকে দেখি,
রাতে  চন্দ্রালোকে তব মুখ হেরি,
আমার সকল চিন্তায় তুমি, আমার সকল ভাবনায়  তুমি,
আমার সকল কাজে তুমি,  তাই দেখি  তোমায় সর্বক্ষণে ।
কেমন করে বলব যে  আমার কে হও তুমি ।


  আমি তোমাকে পাবার জন্য খুঁজি, আমি তোমাকে না পেয়ে খুঁজি,
  আমার জন্য হাসি তুমি, আমার জন্য কান্না তুমি,
আমার সুখেও তুমি, আমার দুঃখেও তুমি,
যেখানেই যাই আমি তোমাকে দেখি,
আমি যেখানেই দেখি ওখানেই তুমি ।
কেমন করে বলব যে আমার কে হও তুমি ।


তোমার সৌন্দর্য প্রকৃতির দান,
ভালোবাসার সুগন্ধ জড়িয়ে আছে তোমার মধ্যে,
বারি ভরা  মেঘের মতো তোমার কেশরাশি,
ফুটন্ত গোলাপের মতো তোমার ওই অধর যুগল,
তোমার হাসিতে ঝরে মুক্ত,
তোমার অশ্রুতে হয়  আমার সব কিছু হয় মলিন,
তোমার সর্ব অঙ্গে বাজে তানপুরার সাত সুর,
কাঁচের মত স্বচ্ছ তোমার মন, ফুলের মত কোমল তোমার তনু,
পোশাকে তোমার নানান প্রজাপতির আঁকা রঙ্গোলী,
ইন্দ্রধনুশও যার কাছে হয়ে যায় ম্লান।
কেমন করে বলব যে আমার কে হও তুমি ।

তুমিই আমার সম্পদ, তুমি আমার ইজ্জত,
আমার সব চাওয়াতে তুমি,  আমার সব পাওয়াতে তুমি,
আমি সবসময় তোমাকেই দেখি,  আমি সব সময় তোমাকেই খুঁজি,
তুমিই আমার ভাগ্য,  তুমিই  আমার রাশি,
আমার সকল গ্রহে পাই  তোমার  উপস্থিতি,
পূর্বে  তুমি, পশ্চিমে তুমি, উত্তর তুমি, দক্ষিণে তুমি,
আমার সকল মুহূর্তে  তুমি,  আমার সারা জীবনে তুমি,
আমার সকল রাস্তায় তুমি,  আমার সকল গন্তব্যস্থলে তুমি,
আমার  জন্য নদীও  তুমি,  আমার জন্য সাগরও তুমি,
আমি শুধু তোমাকেই দেখি,  আমি শুধু তোমার কথাই ভাবি,
আমি শুধু তোমাকেই জানি,  আমি শুধু তোমাকেই মানি,
তোমার মধ্যেই আমার সর্ব  পরিচয়,
তুমিই আমার আরাধ্য,  তুমি আমার ভগবান ।
কেমন করে বলব যে  আমার কে হও তুমি ।
কেমন করে বলব যে  আমার কে হও তুমি ।


রাত্রি দুটোর সময় সেই পাঁচ বছরের ছেলেটি,  যে পিতা বুকের কাছে শুয়েছিল হঠাৎ একটা আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যায়।  সে চমকে উঠে বসে পরে। নাইট ল্যাম্পের আবছা আলোতে সে দেখে, তার পিতা চোখ বুজে দুহাত বাড়িয়ে যেন কাকে ডাকছে আর মুখে বলছে সকালের মতো সেই রকম কবিতা ।


কেমন করে বলবো যে আমার কে হও তুমি,
আজ এতদিন পরে তোমাকে দেখে আমার মনে হল,
এক রুক্ষ সূক্ষ্ম মরুভূমির মধ্যে
যেন এক বিন্দু বারিধারা
অগ্নি সম মরুভূমিকে শীতল করে দিয়েছে,
আজ এতদিন পরে তোমাকে দেখে মনে হল,
একটা বন্ধ ঘরের মধ্যে এক টুকরো আলোর কণা
এসে সমস্ত ঘরের জমাট অন্ধকারকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে,
আজ এতদিন পরে তোমাকে দেখে মনে হলো ,
এক মৃতপ্রায় ব্যক্তি, যার আত্না শরীর ছেড়ে যাবার জন্য প্রস্তুত,
তার মধ্যে যেন আবার নতুন করে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা ফুটে উঠেছে,
সে শয্যা ছেড়ে উঠে বসে দুই হাত বাড়িয়ে ডাকছে আর জিজ্ঞাসা করছে
কেমন করে বলবো যে আমার কে হও তুমি ।
কেমন করে বলবো যে আমার কে হও তুমি ।
স মা প্ত