(বন্ধুরা, গত মাসে 'সে আসছে' [৬ অক্বতোবর প্রকাশিত http://www.bangla-kobita.com/chandrasekhar/poem20131006031927/}  একটি কবিতা লিখেছিলাম। এটি তাঁর পরের অংশ। এটি লিখতে অনেকটা সময় লেগে গেল বলে ক্ষমাপ্রার্থী। আশা করি ভাল লাগবে। এই লেখার সমস্ত কৃতিত্ব বন্ধু মনোরঞ্জন ব্যাপারীর, যার লেখা একটি গল্প আমাকে এ-লেখা লিখিয়েছে।)
----------------------------  
... অনাদিকাল কেটে গেছে সে-দিনের পর থেকে
পুজারীর আজও শঙ্কা সে আসবে, আসবেই গ্রাম থেকে
চণ্ডাল জানে না থামা বা হেরে যাওয়া, তাই আসবেই
এবং, আশঙ্কা ঘোর, ভেঙে তার সব বাধা যাবে মন্দিরেই।


নিত্যকার শঙ্কা নিয়ে আজও সে বিকালের দিকে
রেখেছিল চোখ পেতে জঙ্গলের প্রান্তে ধুলোমাখা পথে
তখনই দেখেছে, সে আসছে… সে আসছে পথ বেয়ে
অনেক ঋজু যেন, অনেক প্রশান্তি নিয়ে দৃঢ পায়ে


পুজারী কৌশল ছকে, তাঁকে যেতে দেবে গর্ভগৃহেই
তারপর, বাহিরদ্বার বন্ধ হয়ে যাবে আপনিই
সন্ধ্যার আরতির মুখে ভক্তসমাগমে খুলে দেবে দ্বার।
তারপর? তারপর বলি ও জয়জোকারে চণ্ডাল সৎকার।


এ-সব কিছুই জানে না সে ‘মূঢ’ চণ্ডাল। নগ্নপদে হেঁটে চলে
যেন কোনও সন্ন্যাসী এই পথে বিশ্বজয়ে চলেছেন।
ঘামেভেজা শরীরে পিছলায় অস্তগামী সূর্যের আলোক
পদভারে ওড়ে ধুলো, মাথায় বেঁধেছে সে পাখির পালক


পুজারী এসেছে মন্দিরের দ্বারে… কিন্তু একি? চণ্ডাল চলেছে
দেখি দূর লক্ষ্যে মন্দির পেরিয়ে। এত অবহেলা! দেবতাকে
দেখতে চাইবে না? পুজারী এবার চন্ডালের মুখোমুখি,
‘আসবে না? দেখবে না সিদ্ধেশ্বরে, নে-দেখেই একবার গেছ ফিরে…’


‘না, থাক’, শোনায় চণ্ডাল, ‘কি হবে আর তাঁকে দেখে
তিনি তো মন্দিরের স্বর্ণসম্পদের উৎসমুখ, তুমি তাঁর
নিত্যপুজারী। আজও তো হলনা সিদ্ধিলাভ, মনের প্রসার!
একবার তাঁকে দেখে আমারও হবে না চিত্ত-চমৎকার।


তার চেয়ে ওই দূরে নিরন্ন বস্তিতে অন্ধকারে প্রতিদিন
অগণিত মানবশিশু আনন্দে বাস করে। নিজে না খেয়েও
অপরে জোগায় অন্ন, আশা দেয় নিরাশের বুকে
মন্দিরে আঁটে না সে, মনে আমি যে পেয়েছি তাঁকে।”


নবগ্রাম
১১ নভেম্বর, ২০১৩