আকাশে রোদের ঝলকেও কেন যে বৃষ্টির গন্ধ পাও! শীতের রাতেও ঊষ্ণতার স্পর্শ পাও! কী করে পাও!
আমি তো বালুরাশির অতল থেকে এতটুকু সমুদ্রের নোনা হাওয়া চেয়ে নগরে বন্দরে হেঁটে গেছি। পায়ের নিচে মরুর বালু তেতে উঠে আমাকে বার বার দেখিয়েছে আমারই ভুল। আমিই তো কালিদাস হয়ে গাছের ডালে বসে সেই ডালই কাটছিলাম। আমার ভুল তোমরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছ।
আর আজ, তোমাদের দিকে তাকিয়ে আমি-ই হেসে উঠি। আমি হাসতে হাসতে অসংখ্য বুদবুদ হয়ে জলের নিচ থেকে ভেসে উঠি। আমি দেখি তোমাদের বানানো সৌধ কেমন তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে। তোমাদের সেতু কেমন বালির পাহাড় হয়ে ওঠে। সামান্য ছবিও কেমন তোমাদের ভয় দেখায়। অবোধ শিশুরাও কেমন করে শত্রু হয়ে যায়। আমি ফের দেখি, কালিদাস যে ডালে বসেছে, তারই ডাল কাটছে।  
তার চেয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মাথায় ঝলমলে ফেনার প্রেম বোধহয় ভাল ছিল। ভালবাসার মধুগুঞ্জরণ অনেক বেশি আপন ছিল। সামান্য মাটির ঘরে দু-বেলা নুন-ভাত এই উন্নয়নের চেয়ে অনেক বেশি শান্তির ছিল না কী? ঐ যে দূরের পাহাড়ের মাথায় জমে থাকা শ্বেত্শুভ্র কিরিটীমালার বিদায়ী সূর্যের ঝলক, সে তো সে কথাই বলে যাচ্ছে। শুনতে পাচ্ছো?
আমি আজও গভীর অরণ্যে অজানা তরুর মূলে খুঁজে চলেছি কোনও অচেনা ভেষজ। শপিং মল, মাল্টি-স্টোরি আবাসন, গা এলিয়ে শুয়ে থাকা ঝকঝকে অ্যাসফাল্ট পথ, সিকি কোটি-অর্ধ কোটির বিলাসী গাড়ি, ঝাঁ-তকতকে শহরের পথে পথে সাদা-নীল আলোর প্যাঁচালো উপস্থিতি, সংস্কৃতি কেন্দ্রের চার পাশে দু-মানুষ উঁচু পাঁচিল আমাকে ক্রমশ যোজন যোজন দূরে ঠেলে দেয়। আমি যাচ্ছি বনানীর কাছে, ভেষজের কাছে, সমুদ্রের জলে, পাহাড়ের মাথায় – যেখানে সঞ্চিত আছে প্রকৃতি রেখে যাওয়া ভালবাসার প্রকৃত ওষুধ।
আমি দেখি, মানুষের হৃদয়ে চারাগাছ জন্ম নিচ্ছে। সেই চারা বড় হলে তাঁর বুকে খেলতে আসছে ঝাঁক ঝাঁক পাখী, প্রজাপতি,মৌমাছি-ভ্রমর। আমি জানি, সেই চারার গোড়ায় তুমি জল দেবেই। চারা যে তোমার। সেই পাহাড়, সমুদ্র, নদী, পাখি – সব তো তোমার। আমি জানি, সেদিন তুমি আমারই বন্ধু হবে।