______ঘোর, অতিক্রান্ত আবেশ


হাঁটি হাঁটি পায়ে সুমধুর কাব্য কথা
পিতা, পিতামহের আঙুল চেপে, বা বা, মা মা
অ আ খিলখিলিয়ে হাসি, অদম্য মায়া;
মার আঁচল টেনে।
বেড়ে উঠার প্রথম ধাপে হাসি ঠাট্টা
আহ্লাদ মিলে।
কত আদর চুমা! চাঁদের কপালে টিপ,
আয় আয় চাঁদ মামা।


প্রথা ভেঙেছে এবার পিতামহের আঙিনায়
ডালিম গাছে টোনাটুনির বাসা,কুয়া তলায় শিউলি ঝরে
পুঁই মাচায় প্রজাপতি, চালকুমড়া উনুন চালে, ধুঁয়া উঠে
সকাল সাঁঝে।


ধোঁয়ায় মায়ের চোখে জল ঝরে, রান্নার কৌতূহলে
কোলে বসা ঐ শিশুটি মাতৃদুগ্ধ টানে বাটে, সুখ রসে
সইয়ে সইয়ে মায়ার অপার
তৃপ্তি লয়ে।


মৌসুম ঝরে যায়, বেলা অবেলা হয়
দিন রাত হয়, এবার মেঠো পথে হাঁটবার পালা
এখানে সেখানে যেন দলছুট কবিতারা
মায়ের আঁচলে।


গোলক ধাঁধা, যেন বৃত্তের চক্রে বাস
ঘুরে ফিরে একই আঙ্গিনা মহল; কত কত প্রশ্ন যোগে?
আবেশে জীবন ছোটে, এদিক ওদিক উপর নীচ
আকাশ নীল জোছনা।


মায়ের ছড়া বুনে রাত প্রহর
এদিক ওদিক ওটা কি? এই টা কি?  হাতে নিয়ে নারাচারা
মুখে পুরে কান্না করা; চতুর দিকে যেন ঘোর আঁধার
মায়ের চোখে তার আলো ফুটে।


মা ডাকে কত কি? কু তু কু তু হাসিতে কুটো কটু
ডেকেছে মা; স্বর্গ এসেছে নেমে মায়ের আঙিনায়
আয়রে তোরা আয় খিলখিলিয়ে হাসির
আলো মিলিয়ে যে যায়।


এমনি করে মিষ্থক্রিয়া আবেশে বেড়ে উঠে যে ধন
ভয় নির্লিপ্ত স্বপ্ন ছাড়া উদাস নাহি হয়
ঐ আকাশ নীল ঝর ঝরিয়ে বৃষ্টি মেঘের চাতাল ফুঁড়ে
রৌদ্র ঝলমলিয়ে উঠে;
====২
সময় খাটো হয়ে যায়, বাড়তে বাড়তে বীজের অঙ্কুর
তার পিছনের কথা ভুলে দুরন্তপনায় মাতে
সকাল বিবেল এখন উঠুন জুড়ে কইতরের ঝাঁক
কিচির মিচির চুঁড়ুইয়ের সাথে।


অজানা নিমিত্তে শাপলা শালুক ফুটেছে
বনো ফুলের সুবাস রাত বিরাতে ডুবে ডুবে ঘুমে
কত কত স্বপ্ন জোয়ার ভাসার মতো করে? ভাসিয়ে দেয়
উড়িয়ে নিয়ে যায় আকাশের সীমানায়।


তারে দেখ নাই চোখ খুললেই মিইয়ে যাবে,
তাই খুলে না চোখ, জননী ডেকে ডেকে সারা উঠরে সোনা
বেলা যায় বয়ে! স্কুল পাড়ায় পড়েছে সোরগোল
খোকার স্বপ্ন যায় টুটে।


কি আর করা! বন্ধুরা জুটেছে বেশ চল এবার মেঠপথ মারিয়ে
গুন গুন হইহুল্লুর করে স্কুলে যায়; এবার পাঠে মগন
জানলার পাশে বানান মাচায়, টোনাটুনির খুনসুঁটি
মন এবার মাচার পড়ে, পড়া কি ছাই? মনে নাহি ধরে।


বাসা বেঁধেছে কি? হপ্তা পড়ে জানা গেল ডিমে তা দেয়
দুজন মিলে; জানলার পাশে, দেখতে কষ্ট নাই মোটেই
নামতার ধারের কাছে নাই, খাতায় তাই সব হিজিবিজি আঁকে
নিতাই বাবু তাই গেল ক্ষেপে; হবে পাশফেল ভেবে কি হবে?


এমনি গহন লাগা কাতর বেশ, ফিরে ফিরে কৈশর আসে
গোল্লাছুট, ডাংগুলি, মার্বেল গুলতি হাডুডু কি খেলা চাই?
তাল পুকুরে তাল সাঁচ কুঁড়ে কুড়ে খাই; পুকুর জলে দাপাদাপি
ঘোলা জলে ডুবা ডুবি মায়ের বকুনি আল্লাদে আটখান।
====৩
এমন অবোধের শৈশব,
মায়ের হাতের মার খাওয়া, বকুনি, কিছুই থাকেনা মনে
পরের দিন আবার সেই ছুটে চলা;
শৈশব যে এমনি; নিত্য হারমোনিয়াম বাজে।


যেতে যেতে বই রেখে ঘাসে
আত্মজা এক স্বপ্ন কুড়ানি আম বাগানের মাঝে
রাজা রানীর গপ্পোর ফাঁদে, সবাই বসেছে এঁটে
এবার যে স্কুল গেল ফেঁসে।


যাক তাতে কিবা আসে যায়
ভাবনা নেই মোটে, মায়ের বুকুনিতে সাঁঝে তখন বুঝি
মাথা টা খুলে; আর হবে না এমন মা! গোবড়ে পোকার দল এমন
দেখতে দেখতে বেলা গেল বেড়ে
স্কুলের খেই হারিয়ে।


যেতে যেতে স্কুল পথে,
ধান বোঝাই মহিষের গাড়ী যায় গন্জের হাটে
চাকার ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ তুলে; কাদা প্যাকে গেছে আটকে
মহিষ জোড়া পরেছে শুয়ে কাদায় হাটু জল ডুবে।
গারোয়ান ভাই যতই চাবুক মাড়ে
নাহি উঠে মহিষ জোড়া; গাঁয়ের আরও পাঁচজন এলো
চাকা ধরে মার টান, উঠ গাড়ী গারোয়ান
এমনি বলে মাতোয়ারা গাড়ী মাহিষের গান
স্কুল ফেলে আজও গেল বেলা
এবার বাড়ী ফেরার পালা।


মা গো মা,
জানো আজ কি হয়েছে? স্কুল যেতে। শুনলে তুমি
হাসতে হাসতে, যাবে বকুনি ভুলে।
কি হযেছে? আজও স্কুলে যাওয়া হয় নি সেই গপ্পো তো?
বলবি বল; শুনি।
মা বড়ই গোমড়া মুখে রইল
আর বলা হল না গপ্পোটা, তার চেয়ে বই ফেলে উঠানে যায়
মায়ের চোখের একটু আঁড়ালে।
মায়ের রান্নার ধোঁয়ায় চোখ মুছতে মুছতে
উঠানে এলো, আমার দিকে তাকিয়ে
একটু মচকি হাসি দিয়ে বলল, আয়
ভাত খাবি আয়।
======৪



১৪২৬/হেমন্তকাল/ কার্তিক।