[ অমৃতের সন্তান ]


তোমরা দেখেছ কি
দারিদ্র সীমার নীচে পড়ে থাকা
ওই মানুষগুলোকে?
শুনেছ কি ওদের করুণ কাহিনী,
অনুভব করেছো কি
ওদের মনের ব্যথা?
জানি, ভাববার অবকাশ তোমরা পাওনি,
ছুটে চলেছো গতানুগতিকতার পিছনে।
একটিবার ও ভেবে দেখছ কি
কি লাভ এই মোহাবিষ্ট
গতানুগতিকতার পিছনে দৌড়ে।


একবার ও ভেবে দেখছ কি
ওরাও আমাদেরই মত
রক্তমাংসে গড়া মানুষ,
আমাদেরই মত স্বাধীন দেশের নাগরিক।
কেন আজ তবে
ওদের প্রতি এই অবিচার
কেন ওরা উপেক্ষিত, অবহেলিত
কেন ওরা পায়না
দুবেলা দুমুঠো মুখের গ্রাস?
আছে কি তোমাদের কাছে এর জবাব?


জানি,
নিরুত্তর মৌনতাই তোমাদের জবাব।
কিন্তু না-
আজ আর নিরুত্তর থাকলে চলবে না
জবাব এর দিতেই হবে,
ভাবতে হবে আমাদের
বুঝতে হবে আমাদের
ওদের ব্যথা।
আমরা তো জানি
স্বরাজ আনতে ওরাও সামিল হয়েছিল
আমাদের সাথে
বলি দিয়েছিল ওদের প্রাণ।
অথচ কি নিষ্ঠুর ওদের ভাগ্যলিপি,
স্বরাজ এলো-
পরাধীনতার লাঞ্ছনা ভুলিয়ে দিয়ে
কিন্তু ওদের কপালে ফলল না
স্বরাজের স্বপ্নের ফসল
আঁধারের অতল গহ্বরেই রয়ে গেল ওরা।


স্বাধীনতার মুনাফা লুটতে লাগলো
মুখোশপরা মুষ্টিমেয় বাস্তুঘুঘুর জোট;
তাদের দেখানো মেকি স্বপ্ন আর
কালো হাত ধীরে ধীরে গ্রাস করলো
অগনিত দেশবাসীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন;
কুক্ষিগত করলো
স্বরাজের সোনার ফসল।
আর ওরা-
ওরা হলো পদদলিত, হেয়, তুচ্ছ-
অথচ এই মানব সমাজের বৃহত্তম অংশ ওরা
ওইসব মৌন, মূঢ়, অমৃতের সন্তান।


বন্ধু,
আজ পালাবদলের সময় হয়েছে,
সোচ্চার হতে হবে আমাদের-
এই গতানুগতিকার বিরুদ্ধে,
চিনিয়ে দিতে হবে আঙ্গুল দেখিয়ে
মুখোশপরা ওই মানুষগুলোকে,
যারা প্রতিনিয়ত কেড়ে খাচ্ছে
সমাজের নিচের তলায় বাস করা
ওই মানুষগুলোর মুখের গ্রাস,
পলে পলে শুষে নিছে
ওদের প্রতিদিনকার শ্রমের রক্ত
ওদের বেঁচে থাকার অধিকার।


বন্ধু,
আজ জনে জনে বুঝিয়ে দিতে হবে
তোমরা কখনোই হীন নও-
নও তুচ্ছ ব্রাত্যজন;
অনাহারে, অবহেলায় থেকেও
তোমরা বেঁচে আছ,
নিজের অজান্তে গড়ে তুলেছে
সভ্যতার ইমারত-
যে ইমারতের চূড়ায় বসে
সাফল্যের আস্ফালন করছে তারা,
চোখে যাদের তাচ্ছিল্যের হাসি-
তোমাদের দিকে তাকিয়ে।
যে সভ্যতার বলে আজ তারা বলিয়ান
সেই সভ্যতার বুনিয়াদ
গড়ে তুলেছে তোমরা-
তোমাদের শ্রমের ঘাম আর-
দুর্ভ্যাগের অশ্রু দিয়ে।


জনমত গড়ে তোলো বন্ধু,
তোমরাই ভবিষ্যৎ -
এই নতুন দুনিয়ায়।
প্রতিবাদ করো,
সোচ্চার হও এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
এই মেকি স্বাধীনতার খোলস ফেলে
উত্থান ঘটবে যে নতুন স্বাধীনতার
সেই স্বাধীনতা গড়ব আমরা,
তোমার আমার রক্ত দিয়ে।
সার্থক হবেই হবে-
তোমাদের এই ক্লান্তিহীন শ্রম,
প্রত্যাখ্যান বঞ্চনার পালা হবে শেষ।


[চামরাইল, হাওড়া, প:ব:, ভারত, ১৯৮৪]
@চিন্ময়
বিঃ দ্রঃ : আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে লেখা কবিতাটি। প্রকাশ পেয়েছিল তৎকালীন পত্রিকা "পরাগ"-এ। আজও সমান প্রাসঙ্গিক।