এক.
দোয়া কবুল হয় না বলে নিজেকে খুবই জঘন্য পাপী মনে করি ।হালাল খাদ্য না খেলে নাকি দোয়া কবুল হয় না ।খাদ্য হালাল-ই খাই, হয়তো ইনকামে কিঞ্চিৎ ভেজাল আছে! কিন্তু ইবলিশ সাহেবের কথায় হঠাৎ স্বস্তি ফিরে পেলাম যেন! ইবলিশ সাহেব কুমন্ত্রণা দিলেন -চিশতী  নিজেকে এতো পাপী বান্দা মনে করিস কেন? তুই তো প্রথম শ্রেণীর ভালো মানুষ!বাঘা বাঘা পীর-বুজুর্গদের দোয়াও এখন কবুল হয় না।ইস্! ইবলিশের প্রশংসাটা যদি আমার বউ শুনতে পেতো!যদিও হাসতে হাসতে দমে খিল লেগে যেতো আমার বউয়ের! আমি প্রথম শ্রেণীর ভালো মানুষ, এ কথা কেউ দশতলা বিল্ডিং এর উপর থেকে লাফ দিতে দিতে বললেও আমার বউ বিশ্বাস করবে না ! তার ভাস্যমতে-একজন পুরুষের যতগুলো বদ গুণ থাকতে পারে, তার চেয়ে কয়েকগুণ ঢের বেশি আছে আমার মধ্যে ! আমি নাকি শয়তানের আপন খালাতো ভাই!


দুই.
মাত্র কিছুদিন আগেই টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতে বিশ্ব বিখ্যাত মৌলভী সাহেব উর্দুতে দোয়া করলেন-ইয়া আল্লাহ্ বাংলাদেশকো সৌদি আরব বানা দে।কিন্তু বুজুর্গ মৌলভী সাহেবের দোয়ার উল্টো'টা ফলতে শুরু হয়েছে! বাংলাদেশ এখন সৌদি আরব নয়, ইউরোপ-আমেরিকা হতে শুরু হয়েছে!১৪ই ফেব্রুয়ারি,বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই পরিস্কার বোঝা গেল তা !


তিন.
চার বন্ধু মিলে পার্কে ঘুরতে বেরিয়েছি।উদ্দেশ্য বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসা বিনিময় করতে আসা প্রেমিক-প্রেমিকাদের হালকা ডিস্টার্ব করা! সঙ্গে গ্রাম থেকে আসা হুজুর বন্ধুও আছে। যে দাখিল পাশ করে গ্রামের এক মসজিদে ইমামতি করছে। সকালে মক্তবে বাচ্চাদের পবিত্র কুরআন মাজিদ শেখায়। খুব পরহেজগার মানুষ। স্কুলের বেঞ্চ বা টয়লেটের দেয়ালে আখি+নয়ন লেখা দেখেই যে বলে উঠে - এসব কিয়ামতের আলামত! সে সাদা মনে আমাদের সাথে ঘুরতে এসেছে পার্কে। শহরের পার্কগুলোতে ইউরোপ - আমেরিকার লাইভ দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা নেই তার ।


চার.
যতই সামনে এগোচ্ছি, বিস্ময়ে ততোই চোখ ছানাবড়া হয়ে আসছে! ফাগুন এসেছে আজি এ জঙ্গলে! চারদিকে জোড়ায়- জোড়ায় শুধু তরুণ-তরুণী! সাংবাদিক কিংবা ইউটিউবার ছাড়া একজন কপাল পোড়া সিংগেল তরুণেরও দেখা পাওয়া দুষ্কর!  একটু ভদ্র কিসিমের (হয়তো প্রপোসড করতে আসা) দু'চার জোড়া তরুণ - তরুণী লোকালয়ে গোলাপ হাতে পাশাপাশি হাত ধরে বসে বাদাম কিংবা আইসক্রিম খাচ্ছে।আর অধিকাংশ শিরি-ফরহাদদের অবস্থান জঙ্গলের অভ্যন্তরে। যত জঙ্গল, ততোই যেন মঙ্গল! লোকালয়ের এসব মামুলি দৃশ্য দেখেই হুজুর বন্ধু শুধু আস্তাগফিরুল্লাহ্ আর নাউযুবিল্লাহ বলে যাচ্ছে সমানে।  আর যতোই জঙ্গলের দিকে চোখ যাচ্ছে, ততোই অন্তরঙ্গাবস্থায় রোমিও-জুলিয়েটেদের দেখা মিলছে!কোথাও কোথাও এ অনাবৃষ্টির দিনেও ছাতার নিচে কপোত-কপোতি, কোথাও বা চাদর বা ওড়না দিয়ে লুকানো মুখ, কোথাও আবার দেখা যাচ্ছে-ডেটিং করতে এসে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করায় প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে সেবা নিচ্ছে কেউ কেউ!কোনো যায়গায় আবার প্রেমিক যুগলের কোলোকুলির দৃশ্য! যেন সবেমাত্র ঈদের সালাত শেষে কোলাকুলি শুরু হয়ে গেছে! যতোই নির্জন জঙ্গলের দিকে যাচ্ছি ততোই চূড়ান্ত রকমের অসামাজিক কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করছি আমরা! স্বাধীনতা কী তা এখানে এলেই প্রকৃষ্টরূপে প্রত্যক্ষ করা যায়! মহান স্বাধীনতার স্বাদ যথার্থভাবে উপভোগ করছে এ জঙ্গলে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে আসা লাইলি - মজনুরা!  ইমাম বন্ধু এ জাহান্নামের জায়গা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু এ চমৎকার(!) শ্যুটিংয়ের দৃশ্য দেখে বাকি বন্ধুদের মন সায় দিচ্ছে না পার্ক থেকে বের হয়ে আসতে ! ক্ষুধার্ত কালেভদ্রে  অপরের খাওয়া দেখেও নাকি শান্তি পায়! কিন্তু কপালে সে সুখ টেকসই হলো না ইমাম সাহেব বন্ধুর কারণে। সূর্য মামার প্রস্থান হয়েছে পশ্চিমে। মাগরিবের আযান শোনা যাচ্ছে চারিদিক থেকে। ইমাম সাব বন্ধুর পিড়াপিড়িতে একান্ত বাধ্য হয়েই পার্ক থেকে বের হয়ে আসতে হলো। তিন বন্ধু মিলে ক্ষিণ গলায় গান ধরলাম-বসন্ত এসেছে আজি এ জঙ্গলে... আর ইমাম সাব বন্ধু শুধু নাইযুবিল্লাহা, আস্তাগফিরুলালাহ্ পড়ছে!!