গোয়ালেতে থাকে যারা, গৃহপালিত হয় তাঁরা,
      শান্ত প্রকৃতির জীব;
বনে, বাদারে, জঙ্গলে থাকে যারা, বন্য তাঁরা,
      নির্বোধ বুদ্ধিতে শিব।


গৃহপালিত, সমাজবদ্ধ ওরা কভু হয় না রুদ্ধ,
       পরিচিত গো-পালের ধামে;
এই গোপালের রাখাল, ওদের হয় না আকাল,
       নির্বাচিত গণতন্ত্রের নামে।


দুষ্টু রাখাল আর গোবলয়ের গো-পালদের মাঝে,
        দ্বন্দ্ব আছে যুগে যুগে;
সেই আদি থেকে ভাবনাগুলো চলছে এঁকে বেঁকে,
      তাঁরই ফল সমাজ ভোগে।  


গরুরপালে আপন মনে, পুরুষ নারীর বিভাজনে,
      শুধু নারীরাই পুড়ে মরে;
তাই আজও ঘর পোড়া গরুর সিঁদুরে মেঘে ভয়,
      থাকে সিঁদুর পরে বন্ধ ঘরে।


প্রাচীন ধারা বইছে যারা, প্রগতিশীল নয় যে তাঁরা,
      সমাজে পিছিয়ে পড়া গরু এরা;
আর উন্নত ও রুচিশীল, সংগীত ও শিল্পপ্রেমিক,
     অগ্রভাগে চেতনশীল সেই গরুরা।


তাঁদের ঘরে মরে না কেউ কখনও মৃত্যু ভয়ে,
     সিঁদুর রাঙ্গা নারী গরু;
তাই তাঁরা সমান সমান অধিকারে রাখছে ধরে,
     শস্যশ্যামল করছে মরু।


কিছু প্রাচীন গরু রাখছে ধরে আপন করে,
      প্রাগৈতিহাসিক ধারা;
আজও সমাজে গরুর মাংস গরুরাই খায়,
      পাগল গরু যারা।


পাগল গরুর পোলা, নব্য প্রজম্মের যে তাঁরা,
     সভ্যতা ভদ্রতার বারা;
সুন্দরী গাই দেখলে পরেই ঠোঁট উল্টে শিষ মারে,
     এই তো তাঁদের ধারা।


আনন্দের এই গো-বলয়, সভ্য গরুর গাঁ গোলায়,
     তাই তো কত লেখালেখি;
বিশ্বকবির হিতোপদেশ, সিটি অফ জয়ের রেশ,
      বই-  গোরাতে দেখি।


এই গো -সভ্যতা সুপ্রাচীন, গো-বলয়ে আজ ব্যাপ্ত,
      ভাতৃঘাতী যুদ্ধ ঘাঁটে;
যুদ্ধচায় রাখাল হায়নারা, গো-পালেরা চায়না যুদ্ধ,
       নির্বিবাদে জাবর কাটে।  


গোপালের দুষ্টূ রাখাল, ক্ষমতার লোভে,ব্যক্তি স্বার্থে,
        যুদ্ধ বাধায় অঙ্গুলিহেলনে;
সৎ রাখাল গো-পালদের সুস্থ পথে চালনা করে,
       যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা নেয়না মেনে।


কুখ্যাত সেই রাখালরা, গো-য়েরিং আর গো-য়েবেলস,
       হেরেছে সৎ রাখালের কাছে;
প্রতিবাদী ঝড় উঠেছে, পেয়েছি পিকাসোর গোয়ের্নিকা,
       তাই,  গো-বলয় আজও বেঁচে।


গো-য়েরিং, গো-য়েবেলস আর গো-কূলের হিটলার,
      গো-বধে আনন্দ পেয়েছে;
সেই ভালমন্দের যুদ্ধ শেষে হেরেগিয়ে বলদরা সব,
      শাস্তির ভয়ে বিষ খেয়েছে।


গো-বলয়ে গরুদের ভাগ করেছে নানান রঙে,
      স্থান আর কাল ভেদে;
নীল, সাদা, কালো, কত রঙের গো-পালেরা,
      বর্নভেদে আজও কাঁদে।


কালো ষাঁড়রা, লাল পতাকা দেখলে পরেই,
      ভীষণ ভাবে তেড়ে আসে;
তাই গোপালেরা বলে বুর্জোয়া, শ্রেণীশত্রু ওরা,
      সমাজের সুখ তাঁরা নাশে।  


নীলেরা সব আভিজাত্যের গৌরবে গৌরবান্বিত,
         শ্যামলী, ধবলী নয় মোটেই  ব্রাত্য;
সবাই সমাজের মঙ্গলের তরে সাধ্যমত দুধ যোগায়,
         এই যোগান কর্মের  নয় হীনার্থ।


বিলাতের ওই ধবলীরা মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়ায়,
         সঙ্গীতসুধা আর দুষনহীন খাদ্য খায়;
তাই তো তাঁরা ভাবনা হারা চেতন আলোয়,
          দেশ জাতিকে অরগ্যানিক দুধ দেয়।


তৃতীয় বিশ্বের গরু যারা ইঞ্জেকশন নেয় তাঁরা,
        আর তাঁদের দুধে দুষ্টুরা জল মিশায়;
বিশ্বজুড়ে গোপালদের, সবার রক্তই একই লাল,
        পার্থক্য শুধুই থাকে নিজের পেশায় ।


গো-পালরা গোয়ালে থাকে, সুখ-দুঃখ, আনন্দে হাম্বা ডাকে,
       আর সকল বৃদ্ধ গরু জাবর কাটে;
গোবলয়ের গো-পালদের মাঝে ঐক্যের বীজ নিহিত আছে,
      সবাই মিলে বিপদ এলে তাঁরা হাটে।


চারিদিকে প্রাণের মাঝে উঠুক আনন্দের হাম্বা রব,
      হটিয়ে দিয়ে সম্মুখের ঐ কালো সব;
উঠুক জ্বলে বিশ্বজুড়ে অস্তিত্বের দীপশিখা মনের বলে,
       এই মহান সংশোধিত গো-বলয়ে।


৫ই ভাদ্র, ১৪২৫,
ইং ২২/০৮/২০১৮,
বুধবার, সকাল ৮টা।  563 dtd 24/08/2018.


(সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের গরু রচনার অনুকরণে)