শিল্পীর ওই শৈল্পিক সত্তা,
     এক নান্দনিক রূপ;
এই নান্দনিক তথ্য সদা,
      জ্বালায় যে ধুপ।


ফলে সৌন্দর্যমণ্ডিত শিল্প,
      সৃষ্টি হয় ক্রমে;
মোহ মুগ্ধ হয়ে পড়ে,
     না-জানার ভ্রমে।


চারুশিল্প না কারুশিল্প,
      কে এসেছিল আগে?
কারুশিল্প প্রয়োজনীয় শিল্প,
      চারু আসে পরে।


অভাব-অনটনে চারুকলা নয়,
      কারুশিল্প প্রয়োজনে;
কারুর প্রয়োজন মিটে গেলে,
      চারু আসে মনে।


ধীরে ধীরে সৌন্দর্যবোধ,
      নবরূপে জাগে অন্তরে;
দেখি সভ্যতার পদচারণ
      সেই চিন্তাশক্তি ঘিরে।


প্রকৃতি থেকে এসেছে সভ্যতা,
       জগতের ক্রমবিবর্তনে;
উদ্দেশ্য সিদ্ধির একমাত্র পথ,
       নিয়ন্ত্রিত রূপায়নে।


সভ্যতার পূর্ণাঙ্গ ব্যর্থতা কোথায়?
       অনিয়ন্ত্রিত বুদ্ধিবৃত্তি;
কুসংস্কার, ভ্রান্ত অনুমান, ভয়,
    আর  আদিম অপসংস্কৃতি।


পশুবৃত্তি ক্রমে হল প্রশমিত,
        এই বুদ্ধিবৃত্তির ফলে;
কাঠ কুঠুরি সৃষ্টি হল,
     শুধুই বুদ্ধিমত্তার জোরে।


আগুন জ্বেলে পেল শক্তি,
         পশু পালন শুরু;
মাঠে মাঠে বীজ বপন,
         বুক দুরু দুরু।


জীবন শিল্প রুজি-রোজগার,
       কৃষি কার্যের মাঝে;
নিরাপদে থাকবে সুস্থ জীবন,
      মানব সভ্যতার কাজে।


আদিম মানুষের গুহা খনন,
      ওই নিরাপত্তার কারণ;
গুহা গাত্রে নানান ছবি,
       তাঁরা করেছে অংকন।


আর গড়ে ওঠে বাসগৃহ,
        সুষম মন্ডিত করে;
পেয়ে আনন্দ, মনের তৃপ্তি,
        দৈহিক ক্ষুধার পরে।


ধীরে গাছের বাকল ছাড়ি,
    তাঁদের বস্ত্র পরিধান;
শ্রী মন্ডিত করে তোলে,
     চারুশিল্পের প্রাণ।


উৎপাদন প্রাচুর্য যেখানে বেশি,
    অবহেলিত সৌন্দর্য তথা;
সাথে অর্থনৈতিক দামাদল,
    দেখি মোরা হোথা।


চোখের ক্ষুধা, পেটের ক্ষুধা,
     চারু, কারুর মত;
শিল্প-সভ্যতার একই রূপ,
     ধরায় আছে যত।


সুষম মন্ডিত ভাস্কর্য ছড়ায়ে
     দেখি জগৎজুড়ে;
সকলি সেই চিত্তের আবেদন,
      রসে অবগাহন করে।


অসামান্য সেই সৃষ্টির ব্যঞ্জনা,
      প্রকৃতির মাঝে আছে;
মরু, পর্বত, আর নদী, নালা,
       যেন চারুশিল্পে বাঁচে।


অসামান্য সৃষ্টি গুণের ব্যঞ্জনাটুকু,
     রাখে শিল্পীর স্বাতন্ত্র্যতা;
শিল্পীর শিল্পকর্মই দেয় এনে,
     মানুষকে সেই বারতা।


সকল কারু শিল্পজাত সামগ্রী,
     জীবনে নিত্য প্রয়োজন;
চারুশিল্পের ভাস্কর্য সুষমায়,
     হয় উচ্ছ্বাসিত মন।


সুশোভিত চারুশিল্প ভালোবাসে,
      এই আপামর জনসাধারণ;
হেথা ধর্ম-বর্ণের বিভেদ নাই,
      এটাই ললিতকলার মনন।


চিত্র, ভাস্কর্য ও আলোকচিত্র,
     সর্বত্র ছড়ায়ে জগৎময়;
প্রকৃতি তার সৃষ্টি ধারায়,
      এমনি করেই বেঁচে রয়।


নন্দনের সাথে প্রয়োজনের বিভেদ,
      আজ আর উগ্র নয়;
তাই চারু-কারুর সেই বিভেদটা,
       লুপ্তের মুখে প্রায়।


গ্রীকদের নিত্য ব্যবহার্য জিনিস,
        সাজায়ে রাখে জাদুঘর;
ওই শিল্পকর্মটাই মূল্যবান হেথা,
       দেখি সমান চারুকারুর দর।


সেই সৌন্দর্য সাধনার কৌশলটুকু;
       এখন বিশুদ্ধ নন্দনতাত্ত্বিক;
শ্রমশিল্প আর ওই নন্দন কলা,
         আজ বড়ই আত্মিক।


বাসগৃহ একদা ছিল মানুষের,
          মাথা গোঁজার ঠাঁই;
আজ তাহাই হয়েছে নন্দনশিল্প,
          আমরা দেখতে পাই।


প্লেটো, তলস্তয়, নিন্দা করতেন,
         কবি, চিত্রী, গায়কদের;
কামনার রসে, ইন্দ্রিয় বশে,
          নষ্ট করবে মানুষদের।


ধর্ম-দর্শন বুঝি তারই ফল,
       দেখি আমরা জগতে;
ওই নরম মনের মানুষদের,
       চালিত করে বিপথে।


এই ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য চারুশিল্প,
     তাই ভয়টা বোধগম্য;
সেই সম্মোহিত শক্তির জোরে,
     হতে পারে মনন রম্য।


ওই নন্দনতাত্ত্বিক উজ্জ্বল রূপ,
     চোখ ধাঁধিয়ে দেয়;
আর বেবিচারি যৌন সম্ভোগ,
     মনে আশ্রয় পায়।


দেহে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের উন্মত্ততা,
       সত্য বলে জানি;
সেই ইন্দ্রকে বাগে আনা,
      দায় জ্ঞানীগুণীর মানি।


পেটের ক্ষুধা মিটে গেলে,
       মনের ক্ষুধা বাড়ে;
তাই কারুশিল্পের পরে চারুশিল্প,
      মানুষ বরণ করে।


জানি লালিত্যই ইন্দ্রিয় সুখ,
        পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের জোরে;
সুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট হয়,
        মানুষ সবকিছু ভুলে।


শ্রম শক্তি শুধু মানুষকে
     পেটের কথা ভাবায়;
শ্রম শেষে ক্লান্ত মানুষ,
      বিশ্রাম নিতে চায়।


ললিতকলা নান্দনিক শিল্প,
      মনের মনন বাড়ায়;
সেই মনন আবার ইন্দ্রিয়কে,
      নতুন করে জায়গায়।


দার্শনিক প্লেটো আদর্শগত ভাবে,
      ভাবনায় ছিল উজ্জীবিত;
নিন্দিত করলেন নন্দন শিল্প,
       ইন্দ্রিয়ের কারণ গত।


জানি ওই ইন্দ্রিয় দমন,
        সহজ সাধ্য নয়,
তাই দার্শনিক প্লেটো, তলস্তয়,
        পেয়েছিলেন ভয়।


ললিতকলা যৌন চেতনার,
            উজ্জীবন ঘটায়;
তাই দার্শনিকরা আজও বলেন,
      নন্দনশিল্প বড় আবেগময়।


ইন্দ্রিয় সংযম প্রয়োজন আজও,
         এই ললিতকলার যুগে;
না হলে ধ্বংস হবে মানব সভ্যতা,
               ক্রমে ক্রমে ভুগে।


ধ্বংস হবে রাষ্ট্রের শাসন,
      ব্যক্তি স্বার্থে গিয়ে;
রাষ্ট্রশক্তি ভাবে কি আজও,
    জনগণের সুখ নিয়ে?


যে শক্তি তৈরি হলো,
                 মনন শিল্প ধরে;
সেই শক্তি আজ দেখি,
         মানুষকেই পিষে মারে।


জাগতে হবে, ভাবতে হবে,
               শিল্প-সভ্যতার কথা;
সবকিছুই জীবজগৎ নিয়ে,
               সাথে মানুষের ব্যথা।


শিল্প বাঁচুক জীবন বাঁচুক
              বাঁচুক দেশের সাধারণ;
চারুশিল্পের আর ওই কারুশিল্পের
                    যেন না হয় মরন।
        
ইং  ০৫-০৬/১০/২০২০। ১৩৭৯, ১৬/০৭/২০২১।