শীর্ণদেহ, জীর্ণ-বস্ত্র, মাথার চুল অগোছানো একটি বৃদ্ধা।
দুলতে দুলতে হাজার বছর অতিক্রম করে, এসেছে জীবনের শেষ প্রান্তে।
এতদিন শুধু নিজেকে ভুলে বুকের রক্ত পিষে, দিয়েছে তাদের মুখে-
যারা এখন এই অন্ধকারে দিচ্ছে না তার, প্রদীপের শিখা টিও জ্বালিয়ে।


কোথাও নেই সেই পাড়া-প্রতিবেশী,আত্মীয় স্বজন, ধর্মীয় সেবক।
একদিন এসেছিল,দেখা করে গেল ধর্মের সন্তানেরা তারপর নেই, কারো কোনো খবর নেই, কোনো দেখা নেই।
অনেক কাজ! আছে মহোৎসব, তাই ব্যস্ত আছে তারা।


এদিকে বুড়ি,একটু একটু করি মৃত্যুর মুখে যাচ্ছে চলি।
বিছানার কোণে শুয়ে বুক ভরা বেদনা নিয়ে, কাঁদিতেছে সে।
কাল কত প্রিয়জন! আজ ঘটিবাটি নেই,নেই সেই মানুষেরাও,
তারা ডুবে গেছে, তারা ডুবে গেছে স্বার্থের তলে, বুড়িকে অন্ধকারে ফেলে।


গরম চা পেটের কোণ থেকে, কখন যেতো উধাও হয়ে
বুঝতে পারেনা সে, বুঝতে পারলেও বোঝাবে কারে?
কে দেবে ঢেলে অভাগীর মুখে এক বিন্দু জল?
হে ঈশ্বর! সে করেছিল কোন ঋণ?যা তাকে খেতেও দিল না সেদিন- তার ফেরার দিন।


যেদিন শোনা গেল সবে, কুটিরের বুড়িটি গেল চলে জমে থাকে,
সেদিন সকলের মুখে একই রব, কত দুঃখ প্রকাশ, কত প্রসংশা তার!
দলে দলে এল তারা,নীরব প্রার্থনা, হাজার মন্ত্র নিয়ম।
মানুষ দেখানো রথে করে তারা, নিয়ে গেল তাকে স্বর্গের দেশে।


এসব দেখে বুকভরা বেদনা নিয়ে বলে বুড়ি- এতদিন কোথায় ছিলে গো তুমি?
পাড়া-প্রতিবেশী, বংশধর, আত্মীয়-স্বজন, ধর্মের সন্তান।
সেদিন আমি নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম তোদের পায়ে, একটু ভালবাসা পাবো বলে,
দাওনি, দাওনি তোমার কোমল হাতখানি বাড়িয়ে, পাইনি স্নেহের গন্ধটুকুও।


আজ তুমি ঘুমের ঘোরে দেখলে কোনো স্বপন?
চলে এলে এখন।
কি চাও তুমি? দেবে এই অভাগী।
ওরে ভাই! নাই, কিছুই দেওয়ার নাই।


দিনের বেলায় রবির খেলায়,ও ভাই অন্ধ ছিলি, দেখতে চাস নি আমায়,
আজ এসেছিস সন্ধ্যেবেলা খেলতে চাস কোন্ খেলা?
ছিল যত পাপের হিসেব মুছতে তুই এনেছিস ফুলের তোড়া?
সন্ধ্যে ফুরিয়ে রাত গড়ালেও আর যে হবে না দেখা,ও ভাই, কি করে করি তোমায় ক্ষমা???